অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি অনির্দিষ্টকালের জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখা ‘যৌক্তিক নয়’—এমন মন্তব্য করেছেন তারেক রহমান (Tarique Rahman)। মহান মে দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক শ্রমিক সমাবেশে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ মন্তব্য করেন।
তারেক রহমান বলেন, “ফ্যাসিবাদমুক্ত, জনগণের ভোটে প্রতিষ্ঠিত একটি জবাবদিহিমূলক সরকার গঠনের লক্ষ্যে বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে এসেছে। কিন্তু জনগণ মনে করে, এই সমর্থন অনির্দিষ্টকালের জন্য টিকিয়ে রাখা যায় না। দেশে যাতে আর কোনো পলাতক স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সেজন্য জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি।”
তিনি আরও বলেন, “বিএনপির দৃষ্টিতে সংস্কার এবং নির্বাচন—দুই-ই অপরিহার্য। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান—আপনারা সতর্ক থাকুন। সরকারের একাংশ ইচ্ছাকৃতভাবে সংস্কার ও নির্বাচনকে পরস্পরবিরোধী করে রাজনৈতিক বিভ্রান্তি ছড়াতে চাইছে। গণতন্ত্রকামী জনগণের মধ্যে এ নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই আমরা চাই, স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার প্রস্তাবনা তৈরি করা হোক, যাতে কোনো রাজনৈতিক দলের আপত্তি না থাকে।”
তারেক রহমান বলেন, “প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ ও প্রস্তুত করা জরুরি। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা এবং সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা দরকার। তাহলেই জনগণের মনে যে সন্দেহ ও সংশয় রয়েছে, তা দূর হবে।”
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা বলেন, “রমজানে দ্রব্যমূল্য তুলনামূলকভাবে নিয়ন্ত্রণে ছিল, এজন্য আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু রমজান শেষ হতেই চাল ও তেলের দাম বেড়ে গেছে—মানুষের আয়-রোজগার তো বাড়েনি। তাহলে সাধারণ মানুষ তাদের কষ্টের কথা কোথায় বলবে?”
বাংলাদেশকে করিডর হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তাব নিয়েও তারেক রহমান সরব হন। তিনি বলেন, “মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে চলমান গৃহযুদ্ধে মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য বাংলাদেশকে করিডর হিসেবে ব্যবহারের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার—এমন খবর শোনা যাচ্ছে। এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে জনগণ বা তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের না জানিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত, তা সময়ই বলবে। তবে মনে রাখতে হবে, এমন সিদ্ধান্ত নির্বাচিত জাতীয় সংসদের মাধ্যমেই আসা উচিত, জনগণের অভিমতের প্রতিফলন ঘটিয়ে।”
তারেক রহমান আরও যোগ করেন, “বিদেশি স্বার্থ রক্ষার চেয়ে দেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব হওয়া উচিত। ভারত, পাকিস্তান কিংবা মিয়ানমার নয়—বাংলাদেশই আমাদের প্রথম এবং একমাত্র অগ্রাধিকার হতে হবে।”
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় শুরু হওয়া শ্রমিক সমাবেশ ঘিরে সকাল থেকেই নয়াপল্টন এলাকায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ ও উত্তেজনা দেখা যায়। রাজধানীসহ আশপাশের জেলা থেকে মিছিল করে হাজারো নেতা-কর্মী সমবেত হন। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাসাস (JASAS)-এর শিল্পীরা পরিবেশন করেন সঙ্গীত, যেখানে কনকচাঁপা ও মৌসুমীসহ বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় শিল্পী অংশ নেন।
নয়াপল্টন ও তার আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর সতর্কতায় ছিল। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন। বক্তব্য রাখেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir), স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস (Mirza Abbas), গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, রফিকুল আলম মজনু, হাসান জাফির তুহিন, আফরোজা আব্বাস, এস এম জিলানী, এবং নুরুল ইসলাম নয়ন।
সমাবেশে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। পুরো অনুষ্ঠানজুড়েই ছিল বর্ণিল আয়োজন, রাজনৈতিক বার্তা এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলনের এক সরব প্ল্যাটফর্ম।