ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্ব মূল্যায়ন: আস্থা, সাফল্য ও সীমাবদ্ধতার মিশ্র চিত্র

জাতীয় নেতৃত্বের গুরুদায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) নানা মাত্রিক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। জনআস্থা, অর্থনৈতিক সাফল্য, আন্তর্জাতিক খ্যাতির পাশাপাশি নেতৃত্বের বিভিন্ন দিক নিয়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়ও। দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তার কর্মকাণ্ড ও ভূমিকা নিয়ে বিশিষ্ট ব্লগার, লেখক, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রুমি আহমেদের বিশ্লেষণধর্মী এই প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হলো গ্রেডিংয়ের ভিত্তিতে।

জাতীয় ঐক্যের প্রতীক: গ্রেড A

জাতি এমন একজন নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তির প্রয়োজন অনুভব করছিলেন, যার নেতৃত্বে গোটা জাতি একত্রিত হতে পারে। ডঃ ইউনূস সেই ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করেছেন। তিনি ছিলেন সেই নেতৃত্বের প্রতীক, যিনি সংকটে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন।

আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান: গ্রেড A

প্রতিবেশী দেশগুলো, নির্বাসিত আওয়ামী লীগ (Awami League), ও ইউরোপের কিছু দেশের মিথ্যাচার ও গুজবের বিরুদ্ধে একজন আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত ব্যক্তির প্রয়োজন ছিল। ডঃ ইউনূস আন্তর্জাতিক মহলে তার গ্রহণযোগ্যতা দিয়ে জাতিকে একপ্রকার রক্ষা করেছেন।

অর্থনৈতিক ঘুরে দাঁড়ানো: গ্রেড A

ডঃ ইউনূস একটি কার্যকর অর্থনৈতিক টিম গঠন করে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পুনরুত্থান করিয়েছেন। এ পর্যন্ত এই অর্থনৈতিক রূপান্তর প্রশংসনীয়।

সৎ কিন্তু সীমাবদ্ধ সরকার গঠন: গ্রেড B

একটি সৎ ও নাটকবিহীন সরকার গঠনের প্রত্যাশা থাকলেও ডঃ ইউনূস পুরোপুরি সফল হননি। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনের পর দেশে দক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্বের ঘাটতি ছিল। তিনি ভালো কিছু সদস্য নিয়েছেন, তবে তাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন অদক্ষ এবং কেউ কেউ রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন।

জনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা: গ্রেড D

ডঃ ইউনূসের সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। ৩২ নম্বর বাড়ি ভাঙার মতো ঘটনাগুলো তার সরকারের অযোগ্যতা এবং সিদ্ধান্তহীনতার পরিচায়ক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযথ নির্দেশ দিতে না পারায় ‘মবক্রেসি’ বা জনতার অনিয়ন্ত্রিত শাসন পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়।

জনআস্থা নষ্টের আত্মঘাতী পদক্ষেপ: গ্রেড D

যে আস্থা নিয়ে জাতি ডঃ ইউনূসকে গ্রহণ করেছিল, তা ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। মন্ত্রিসভা সদস্যদের অপ্রয়োজনীয় বক্তব্য ও “ইউনূসের পাঁচ বছর” জাতীয় কথাবার্তায় কোনো শাসন বা শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তিনি নেতিবাচক বার্তা দিয়েছেন। নির্বাচন সম্পর্কে পরিষ্কার ও নির্দিষ্ট সময় ঘোষণা দিতে না পারা আস্থার অভাব সৃষ্টি করেছে।

‘কিংস পার্টি’কে মদদ দেওয়ার অভিযোগ: গ্রেড D

ডঃ ইউনূসের প্রতি জনগণের বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও তিনি একটি নতুন ‘কিংস পার্টি’কে সমর্থন দিচ্ছেন এমন অভিযোগ উঠেছে। এতে করে তার দুই গুরুত্বপূর্ণ মিত্র—বিএনপি (BNP) এবং সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।

জনসাধারণের সাথে যোগাযোগহীনতা: গ্রেড F

দেশের নেতার প্রতিদিন জনসাধারণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা উচিত। ডঃ ইউনূস এই দায়িত্ব প্রেস টিমের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। এতে তার টিম অপ্রয়োজনীয় চাপে পড়েছে এবং জনগণের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন ব্যর্থ হয়েছে।

গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনে নেতৃত্বহীনতা: গ্রেড F

ডঃ ইউনূসকে গণতন্ত্র পুনঃস্থাপনের গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি রাজনৈতিক সংলাপ ও সংস্কারে নেতৃত্ব না দিয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজ একজন প্রবাসী শিক্ষাবিদের হাতে ছেড়ে দেন। তার বদলে দোহা বা দাভোসে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও ভবিষ্যতের প্রকল্পে মনোনিবেশ করেন, যা বর্তমান সংকট নিরসনে কোনো কাজে আসেনি।

বিশিষ্ট ব্লগার, লেখক, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রুমি আহমেদের ফেসবুক পেজ পোস্ট থেকে সংকলিত


Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *