ঈদুল আজহার দিন কেটে যাওয়ার পরের সকালেও রাজধানীর বহু সড়কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কোরবানির পশুর বর্জ্য। দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন নগরবাসী, অথচ কর্তৃপক্ষ আগেই জানিয়েছিল—১২ ঘণ্টার মধ্যে পুরো ঢাকা পরিষ্কার হয়ে গেছে। বাস্তব চিত্র কিন্তু বলছে ভিন্ন কথা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (Dhaka North City Corporation) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (Dhaka South City Corporation) গতকাল (শনিবার) রাতেই জানিয়ে দিয়েছিল, তাদের আওতাধীন সব ওয়ার্ড থেকে শতভাগ বর্জ্য অপসারণ শেষ হয়েছে। উত্তর সিটি দাবি করে ৯,৫০০ টন বর্জ্য ও দক্ষিণ সিটি জানায় ১২,০০০ টন বর্জ্য সরানো হয়েছে রাত সাড়ে ৯টার মধ্যেই।
তবে আজ রবিবার সকালে মিরপুর-১৪, আগারগাঁওয়ের ৬০ ফিট সড়ক, পীরেরবাগ, মধ্য মনিপুর, পশ্চিম আগারগাঁও, এমনকি ধানমন্ডি ৮ নম্বর এলাকাতেও দেখা গেছে কোরবানির বর্জ্যের স্তুপ পড়ে রয়েছে। সড়কের পাশ দিয়ে নাক চেপে হেঁটে যাচ্ছেন মানুষ। দুর্গন্ধে পরিবেশ দূষিত হয়ে উঠেছে।
পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা জানান, গতকাল বিকেলেই বর্জ্য সংগ্রহ করে স্তুপ করা হয়েছিল। কিন্তু এরপর আর কোনো অপসারণকারী গাড়ি না আসায় সেগুলো পড়ে রয়ে গেছে। দক্ষিণ সিটির একাধিক ভ্যানচালক জানান, নির্ধারিত সময়ের পর কোনো সমন্বয় না থাকায় তারা বর্জ্য জমা করেও সরাতে পারেননি।
তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতিমধ্যে নিজেদের সাফল্য প্রচারে ব্যস্ত রয়েছেন সরকারের পরামর্শকরা। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া (Asif Mahmud Sajib Bhuiyan) তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শনিবার রাতেই লিখেছেন—”১২ ঘণ্টার কম সময়ে পরিষ্কার ঢাকা। এটি কর্মদক্ষতা, সময়ানুবর্তিতা ও জনকল্যাণে নিষ্ঠার প্রতিফলন।”
তিনি আরও বলেন, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরাই এই শহরের নীরব নায়ক। তাদের নিঃস্বার্থ শ্রমের কারণেই এই সফলতা এসেছে। যদিও বাস্তবতা বলছে, শহরের আনাচে-কানাচে এখনো বর্জ্যের স্তূপ পড়ে রয়েছে। কলাবাগান শিশুপার্কসংলগ্ন এলাকা, যেখান থেকে দক্ষিণ সিটির আনুষ্ঠানিক পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল, সেখানে গিয়েও দেখা গেছে—চার ভাগের এক ভাগ বর্জ্য এখনো পরিষ্কার হয়নি।
উল্লেখ্য, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কোরবানির পশুর সংখ্যা হিসেবে বিশাল কর্মপরিকল্পনার কথা জানালেও বাস্তব বাস্তবায়নে ছিল স্পষ্ট ঘাটতি। দক্ষিণ সিটিতে প্রথম দিন কোরবানি হয় ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩১৭টি পশু। অথচ সেই বর্জ্য সরানোর গতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরক্তি এবং প্রশ্ন উঠছে।
পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, সিটি করপোরেশনের তরফ থেকে দেওয়া সময়সীমা আর বাস্তবতা মাঝে একটি বড় ফাঁক থেকে গেছে। জনসচেতনতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন স্থায়ী সমন্বয় ও বাস্তবায়নের দায়বদ্ধতা।