নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, একটি সংসদীয় আসনে পুরুষ ও নারী—দুজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি রাখার ধারণা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার (Badiul Alam Majumdar)। রোববার বিকেলে রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে ‘নারীর ক্ষমতায়নে সংসদে সরাসরি ভোটে নারী প্রতিনিধিত্ব নির্বাচন: প্রয়োজনীয়তা, চ্যালেঞ্জ ও সমাধান’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি বলেন, “এক ঘরে দুই পীর হইতে পারে না”—এটাই বাস্তবতা।
তিনি দ্বৈত প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিকে অকার্যকর ও বাস্তবতা-বিচ্যুত বলেও মন্তব্য করেন। বদিউল আলম বলেন, “বর্তমানে এমনিতেই সংসদ সদস্যরা নারী সহকর্মীদের চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা তৈরি করেন। এর মধ্যে আবার একজন পুরুষ ও একজন নারী—একই আসনে দুজন নির্বাচিত হলে দ্বৈত কর্তৃত্ব ও দ্বন্দ্ব বাড়বে।”
আরো বলেন, “সংরক্ষিত নারী আসন ১০০টি করা হলে মনোনয়ন বাণিজ্য ভয়াবহ রূপ নেবে। তবে আমাদের কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে মাঠপর্যায় থেকে সত্যিকারের নারী নেতৃত্ব উঠে আসবে, যেটি ভবিষ্যতে সংরক্ষিত আসনের প্রয়োজনীয়তাকেই বাতিল করে দেবে।”
“দ্বৈত প্রতিনিধিত্ব এলাকায় গন্ডগোল বাড়াবে”—শামা ওবায়েদ
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ (Shama Obaid) দ্বৈত প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থাকে বাস্তবসম্মত মনে করেন না। তিনি বলেন, “এটি শুধু নির্বাচনী এলাকায় বিশৃঙ্খলা বাড়াবে। একজন নারী, একজন পুরুষ—কোনোটা নিয়ন্ত্রণে কার হাত, সেটা পরিষ্কার না থাকলে দ্বন্দ্ব তৈরি হবেই।”
শামা ওবায়েদ বলেন, “নারী জনপ্রতিনিধিদের নির্দিষ্ট দায়িত্ব নিশ্চিত করতে হবে। সরকার ও দলকে সেটা মনিটর করতে হবে। তাহলে নেতৃত্বের মধ্যে যে হীনম্মন্যতা তৈরি হয়, তা দূর হবে।”
তিনি সরাসরি ভোটে নারী নির্বাচনের পক্ষে থাকলেও বলেন, “এটা রাতারাতি সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে বাস্তবায়নযোগ্য কাঠামো তৈরি করতে হবে।”
মাঠপর্যায়ের সমস্যার দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে এক নেতা অন্য নেতাকে জায়গা দিতে চান না। রাজনীতিতে এমন মানসিকতা নারী নেতৃত্ব বিকাশে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।” তিনি জানান, বিএনপি তৃণমূল পর্যায়ে নারী নেতৃত্ব তৈরির কাজ করছে।
এসময় নাগরিক সমাজকে আহ্বান জানিয়ে শামা ওবায়েদ বলেন, “বর্তমান সরকারের অন্তর্বর্তী প্রধান উপদেষ্টা এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দিয়ে নারীর রাজনৈতিক অধিকার ও অংশগ্রহণ বাড়ানোর দাবি জানানো উচিত।”
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “নারীদের শুধু ভোট চাইতে, মিছিল-মিটিং করতে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু প্রাপ্য নেতৃত্বের জায়গাটা দেওয়া হয় না।”