ফেনীর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চাকরি দেওয়ার আশ্বাসে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির একটি কল রেকর্ড ঘিরে তৈরি হয়েছে ব্যাপক আলোড়ন। বুধবার (১৮ জুন) বিকেলে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এই কল রেকর্ডে অভিযোগের তীর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপি এর পরশুরাম উপজেলা সমন্বয়ক নাহিদ রাব্বির দিকে।
ফাঁস হওয়া রেকর্ডে শোনা যায়, আসন্ন নিয়োগ পরীক্ষার আগে চাকরিপ্রত্যাশী হৃদয় নামের এক যুবকের কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন নাহিদ। বৃহস্পতিবারের (১৯ জুন) মধ্যে তাকে ৪ লাখ টাকা অগ্রিম দিতে হবে এবং পরীক্ষার পর বাকি অর্থ—এমন শর্তে দেন তিনি। হৃদয় যখন ২ লাখ টাকা কম দেওয়ার প্রস্তাব দেন, তখন রাব্বি সাফ জানিয়ে দেন—“১০ লাখ টাকা থেকে এক পয়সাও কম হবে না।”
রাব্বি আরও বলেন, “বাংলাদেশে এসব চলে না। টাকা ছাড়া কিছুই হবে না। অগ্রিম টাকা দিলে চাকরি নিশ্চিত।” কথোপকথনের একপর্যায়ে হৃদয় বলেন, তিনি বাড়ি গিয়ে বাবার সঙ্গে আলোচনা করে টাকা দেবেন।
চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়া
ফেনী সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল শুক্রবার (২০ জুন) ফেনী জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে বিভিন্ন পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। মোট ১১৫টি পদের বিপরীতে জমা পড়েছে ১২ হাজার আবেদন, যেখানে প্রতি পদের জন্য গড়ে ১০৮ জন করে প্রতিযোগিতা করবেন।
অভিযুক্ত সমন্বয়ক নাহিদ রাব্বির রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবও চোখে পড়ার মতো। ৫ আগস্টের পর থেকে পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান এর সঙ্গে বিভিন্ন সরকারি সভা ও কর্মসূচিতে অতিথির আসনে তাকে দেখা গেছে। তাছাড়া তাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও একাধিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।
অস্বীকার ও পাল্টা দাবি
অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নাহিদ রাব্বি বুধবার সন্ধ্যায় এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “কে বা কারা আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছি। কোনো অপশক্তি তা মেনে নিতে পারছে না।”
তিনি দাবি করেন, কল রেকর্ডটি একটি সাজানো প্রহসন। “AI-এর মাধ্যমে আমার কণ্ঠস্বর নকল করে ভুয়া আইডি থেকে এসব ছড়ানো হচ্ছে। এ এক গভীর ষড়যন্ত্র,” বলেন তিনি।
সতর্কতা ও রাজনৈতিক মেরুকরণ
এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও স্পষ্ট হলো, স্থানীয় রাজনীতির ছত্রছায়ায় কিভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। চাকরিপ্রত্যাশীদের স্বপ্ন আর অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তার ভেতর এমন ঘুষ দাবির অভিযোগ জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
ফেসবুকে ফাঁস হওয়া অডিও এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে, যেখানে সাধারণ মানুষ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি, তবে জনচাপে তদন্তের দাবি জোরালো হচ্ছে।