“সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর না হলে ফিরবে ফ্যাসিবাদ” — সতর্কবার্তা বদিউল আলম মজুমদারের

প্রস্তাবিত সংসদের উচ্চকক্ষে যদি জনপ্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি (PR) প্রয়োগ না করা হয়, তবে দেশে ফ্যাসিবাদ আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে বলে সতর্ক করেছেন ড. বদিউল আলম মজুমদার (Dr. Badiul Alam Majumdar)। তিনি বলেন, কোনো কোনো রাজনৈতিক দল এই পদ্ধতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে, যা গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি।

শনিবার (২১ জুন) রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে নাগরিক সংগঠন নাগরিক কোয়ালিশন (Citizen Coalition)-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘সংসদের উচ্চকক্ষে ভোটের অনুপাতে আসন বণ্টন (পিআর): নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।

বদিউল আলম বলেন, “উচ্চকক্ষে যদি নিম্নকক্ষের আসনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধি নির্বাচন হয়, তবে সেটি পুরোপুরি পণ্ডশ্রম হবে। এতে উচ্চকক্ষ নিম্নকক্ষের রেপ্লিকায় পরিণত হবে, যেখানে দলীয় আধিপত্যের সুযোগ বাড়বে এবং স্বৈরতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে।”

তিনি আরো বলেন, আসনভিত্তিক ব্যবস্থা উচ্চকক্ষকে “ডাম্পিং গ্রাউন্ড”-এ রূপান্তর করতে পারে, যেখানে নির্বাচনে পরাজিত ও অপ্রয়োজনীয় নেতাদের পুনর্বাসন করা হবে। এর ফলে মনোনয়ন বাণিজ্যের আশঙ্কাও থেকে যায়। “তাই উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি (PR) অপরিহার্য,”—বলেন তিনি।

তবে নিম্নকক্ষে সরকারী স্থিতিশীলতার কথা মাথায় রেখে সেখানে এখনই PR পদ্ধতি না করার পরামর্শ দেন বদিউল আলম। তিনি বলেন, “নিম্নকক্ষ আসনভিত্তিক হোক, কিন্তু উচ্চকক্ষে দলভিত্তিক ভোটের হারে আসন বণ্টন হোক, এটাই সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত মডেল।”

আলোচনায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের সদস্য ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলেন, এত বড় রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রীয় সংস্কারে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হওয়া দুঃখজনক। কেউ কেউ অভিযোগ করেন, সরকার ও কমিশন কেবল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে আগ্রহ দেখালেও সাধারণ জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করা হচ্ছে।

তারা আরও বলেন, অতীতে রাজনৈতিক আন্দোলন ব্যর্থ হলেও, জনতার আন্দোলনই দেশে ফ্যাসিবাদ পতনের পথ তৈরি করেছে। এখন সেই আন্দোলনের ফসল হবে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সংসদ এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার—যার গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হতে পারে একটি কার্যকর উচ্চকক্ষ।

আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন নাগরিক কোয়ালিশনের সহসমন্বয়ক ফাহিম মাশরুর (Fahim Mashroor)। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, গবেষক ও নাগরিক নেতারা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *