নিউইয়র্ক সিটি মেয়র প্রাথমিক নির্বাচনে জয়ী হয়ে চমক দেখালেন মুসলিম প্রার্থী জোহরান মামদানি

জোহরান মামদানি (Zohraan Mamdani) নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি নির্বাচনে চমকপ্রদভাবে এগিয়ে রয়েছেন। ৩৩ বছর বয়সী এই ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট রাজনীতিকের উত্থান যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছে। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর এবং রাজনৈতিকভাবে অভিজ্ঞ অ্যান্ড্রু কুমো, যিনি ২০২১ সালে যৌন হয়রানির অভিযোগে পদত্যাগের পর রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা করছিলেন।

অ্যান্ড্রু কুমো (Andrew Cuomo) ফল প্রকাশের পর পরাজয় মেনে নিয়ে বলেন, ‘আজকের রাত তাঁর (জোহরান) রাত।’ যদিও এখনো মামদানি ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাননি, তবুও ‘র‍্যাঙ্কড চয়েস’ পদ্ধতিতে গণনা চলার মধ্যেও কুমোর এমন স্বীকৃতি বিস্ময় তৈরি করেছে।

এই প্রাইমারি নির্বাচন ডেমোক্রেটিক পার্টির ভবিষ্যত অবস্থান নির্ধারণে ‘লিটমাস টেস্ট’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল। ট্রাম্পের নেতৃত্বে রিপাবলিকানদের সাম্প্রতিক জয় এবং ওয়াশিংটনে রাজনৈতিক ভারসাম্য পরিবর্তনের পর, ডেমোক্রেটিক দলের মধ্যে প্রগতিশীল ও মধ্যপন্থী অংশের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠেছে। মামদানির জয় সেই দ্বন্দ্বে প্রগতিশীল অংশের শক্তিমত্তা প্রমাণ করল বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ট্রিপ ইয়াং বিবিসিকে বলেন, ‘নিউইয়র্ক সিটির আধুনিক ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক চমক।’ তাঁর মতে, যখন জাতীয় পর্যায়ে ডেমোক্রেটরা সাহসী নেতৃত্বের খোঁজে, তখন মামদানি সেই আশার প্রতীক হয়ে উঠেছেন।

জোহরান মামদানির জয় আরও ঐতিহাসিক এই কারণে যে, তিনি নির্বাচিত হলে হবেন নিউইয়র্ক শহরের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম এবং প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেয়র। উগান্ডায় জন্ম নেওয়া মামদানি মাত্র সাত বছর বয়সে নিউইয়র্কে চলে আসেন। তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রথাগত ধারার বাইরে। প্রচারে তিনি উর্দু ভাষার ভিডিও এবং বলিউড সিনেমার ক্লিপ ব্যবহার করেন, স্প্যানিশ ভাষাতেও ভিডিও প্রচার করেন। এমনকি ট্রাম্পপন্থী ভোটারদের সঙ্গে কথা বলার ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়।

তাঁর অবস্থান স্পষ্টতই প্রগতিশীল—ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থান ও ইসরায়েল সমালোচনা তাঁকে মূলধারার ডেমোক্রেটদের সঙ্গে বিরোধে ফেলেছে। মামদানির ইশতেহারে রয়েছে বাস ভাড়া স্থগিত, নগর পরিচালিত গ্রোসারি চালু, সর্বজনীন শিশু পরিচর্যা, এবং ধনীদের ওপর কর বসিয়ে এসব কর্মসূচির অর্থ সংগ্রহ।

তাঁকে সমর্থন দিয়েছেন আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজ (Alexandria Ocasio-Cortez) ও বার্নি স্যান্ডার্স (Bernie Sanders)—উভয়েই ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট শিবিরের নেতৃস্থানীয় মুখ।

জোহরানের পরিবারও আলোচনায় এসেছে। তাঁর মা বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার (Mira Nair), যিনি ‘সালাম বোম্বে!’ ও ‘নেমসেক’-এর নির্মাতা। বাবা মাহমুদ মামদানি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক, যিনি ‘Good Muslim, Bad Muslim’ বইয়ের জন্য পরিচিত।

২০২০ সালে মামদানি নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির কুইন্স জেলার প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন। তখনো তিনি তুলনামূলকভাবে অপরিচিত ছিলেন, কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে নিউইয়র্ক শহরের নেতৃত্বে ওঠার দ্বারপ্রান্তে তিনি।

এদিকে, কুমো ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ার বিষয়টি বিবেচনা করছেন। তাঁর ভাষায়, ‘আমি এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি, আমি ভোটের শেষ ফলাফল এবং র‍্যাঙ্কড চয়েস পদ্ধতির চূড়ান্ত পরিসংখ্যান দেখে সিদ্ধান্ত নেব।’

রাজনৈতিকভাবে এক ‘আউটসাইডার’ মামদানির এই উত্থান শুধু নিউইয়র্ক নয়, বরং পুরো যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে পরিবর্তনের হাওয়া বইয়ে দিয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *