“অন্যায় তদবির মানি না বলেই আমাকে ‘ভারতের দালাল’ বলা হয়,”—এক হতাশাগ্রস্ত সুরে এমন মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল (Asif Nazrul)। তিনি বলেন, “আমার কাছে অনেক অনৈতিক তদবির আসে। যখন আমি তা প্রত্যাখ্যান করি, তখনই শুরু হয় আমার বিরুদ্ধে গাঁজাখুরি প্রচার। বলা হয় ভারতের দালাল, তুলে আনা হয় ৪০-৫০ বছর আগের ব্যক্তিগত ইতিহাস।”
বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও অভিযোগ নিষ্পত্তির আইনি কাঠামোর পর্যালোচনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব বলেন তিনি। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)। সভায় আলোচনায় উঠে আসে ‘মব’ সংস্কৃতি, মিথ্যা মামলা, জাতীয় প্রেস ক্লাব দখল, সাংবাদিক গ্রেপ্তারসহ আরও নানা প্রসঙ্গ।
আসিফ নজরুল বলেন, বর্তমান সরকার কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়নি। বরং কেউ যদি ব্যক্তি ক্ষোভ থেকে মামলা করে, তাতে সরকারের কিছু করণীয় থাকে না। তিনি বলেন, “গত ১৫ বছরে পুলিশের হাতে অনেক মিথ্যা মামলা জমা পড়েছে। ৫ আগস্টের পর পুলিশের নৈতিক কর্তৃত্ব ছিল না বলেই তারা মামলা নিতে বাধ্য হয়েছে।”
তিনি মনে করেন, সাংবাদিকদের বিভক্তির রাজনীতি অনেক আগেই শুরু হয়েছে। তারা নিজেরাই প্রেস কাউন্সিল আইনের সংস্কারে আগ্রহ দেখাননি। অথচ এখন সাংবাদিকদের অনেকেই গ্রেপ্তার ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
নিজের দুর্বলতার বর্ণনায় আইন উপদেষ্টা বলেন, “জীবনে কখনো এত দুর্বল অনুভব করিনি, যতটা এই সরকারের অংশ হয়ে করছি। আমার কোনো সাংবিধানিক ক্ষমতা নেই—তবুও যখন মামলা ঠেকাতে পারি না, তখন আমাকেই দায়ী করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়া আমাকে গালাগালি করে, অথচ আমি চুপ থাকি।”
তিনি জানান, উপদেষ্টাদের মধ্যে যারা বেশি পরিচিত, তাদের নিয়েই সবচেয়ে বেশি ‘নোংরামি’ হয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। “ইউনূস স্যার, শফিক ভাই কিংবা আমি—আমাদের নিয়ে প্রতিনিয়ত ভিত্তিহীন প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কিন্তু আমরা এখনো কাউকে আইনি নোটিশ দিইনি। আমরা জনগণের বিবেকের ওপর তা ছেড়ে দিয়েছি।”
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা বিষয়ে আসিফ নজরুল বলেন, “যদি মামলা একটি ব্যবসার অংশ হয়ে যায়, আইনজীবী বা রাজনীতিক যদি তাতে যুক্ত হয়, আর পুলিশ যদি দায়িত্বশীল না হয়, তবে এই চক্র বন্ধ হবে না। এটা শুধু সাংবাদিকদের নয়—সব শ্রেণির মানুষের প্রতিই হচ্ছে।”
একাত্তর টিভির দুই সাংবাদিক গ্রেপ্তার ইস্যুতে প্রশ্ন করা হলে আইন উপদেষ্টা জানান, তাদের বিরুদ্ধে মামলা সাংবাদিকতার জন্য হয়নি। “তবে তারা জামিন পেতে পারেন কি না, সেটা আদালতের বিষয়। মামলাটি করেছে একজন সাধারণ নাগরিক—আমাদের কিছু করার নেই।”
সভায় আরও বক্তব্য দেন বদিউল আলম মজুমদার (Badiul Alam Majumdar), শফিকুল আলম, রুহিন হোসেন প্রিন্স, মজিবুর রহমান মঞ্জু, ববি হাজ্জাজ, সোহরাব হাসান, জাহেদ উর রহমান, পারভেজ করিম আব্বাসী, এম এ আজিজ, ডা. সাখাওয়াৎ হোসেন, আবুল হাসান, পারভীন এফ চৌধুরী, এবং কদরুদ্দিন শিশির।
সভা পরিচালনা করেন সিজিএস-এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান (Zillur Rahman)।