গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের সবচেয়ে বড় সামাজিক ব্যর্থতা হিসেবে ‘মব কালচার’-এর উত্থানকে চিহ্নিত করেছেন প্রবীণ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল (Masud Kamal)। তাঁর মতে, মব সংস্কৃতি এখন যেন একটি বৈধ, রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত আচরণে পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি এক বেসরকারি টেলিভিশনের সংবাদ বিশ্লেষণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “এক বছরে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলো মব কালচার। আমরা এটা আগে এভাবে পাইনি, দেখিনি। এমনভাবে আমরা এটাকে প্রতিষ্ঠা করেছি, যেন এটা বৈধ কাজ।”
মব সহিংসতার ঘটনাগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “মব ভায়োলেন্সের কোনো শাস্তি নেই, এমন উদাহরণ খুঁজে পাবেন না যে কাউকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। ফলে, মব কালচারকে এখন ভয়ঙ্করভাবে গ্রহণযোগ্য বানিয়ে ফেলা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “একজন মানুষ রাস্তায় হাঁটছেন, হঠাৎ চার-পাঁচজন এসে তাকে ফ্যাসিবাদের দোসর বা স্বৈরাচারের সহযোগী বলে মারধর শুরু করল। কেউ এগিয়ে আসবে না। যে এগিয়ে আসতে চাইবে, সেও ভাববে—আমি যদি উল্টো মার খাই? এমনকি পুলিশও পাশ দিয়ে হেঁটে যাবে, কিছু বলবে না। কারণ সে জানে, মব থামাতে গেলে তাকে ক্লোজ করে দেওয়া হতে পারে।”
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা যখন মব হেনস্তার শিকার হন, তখন পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মাসুদ কামাল। তিনি বলেন, “নুরুল হুদার গলায় জুতার মালা পরানো হয়, লাঞ্ছিত করা হয়, কিন্তু ভিডিওতে দেখা গেছে—পুলিশ দাঁড়িয়ে থেকে তাকিয়ে দেখছে। কেউ তাকে থামায়নি। পুলিশের যে ট্রেনিং ছিল, সেটা কি বলে না মব থামাতে? বলেই তো, তাহলে সে করল না কেন? কারণ, এখন পুলিশ সদস্যও ভাবছে—আমার জীবনের নিরাপত্তা কোথায়?”
এই পরিস্থিতিকে রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। মাসুদ কামালের বক্তব্যে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে, দেশে এখন এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যেখানে আইনের জায়গা দখল করে নিয়েছে জনতার উত্তেজনা, নিরাপত্তার জায়গা দখল করেছে ভয়।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “এখন যারা এই মব সংস্কৃতিকে উৎসাহ দিচ্ছেন, তারা জানেন না—শেষমেশ এর পরিণতি কী হবে তাদের নিজের জন্যও।”