সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন যদি রাজসাক্ষী হিসেবে সামনে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন, তাহলে বহু গোপন অপরাধ ফাঁস হয়ে যেতে পারে—এমন মন্তব্য করেছেন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাইয়্যেদ আব্দুল্লাহ (Syed Abdullah)। ফলে মামুনকে দমন করার জন্য ‘সংঘবদ্ধ চেষ্টার’ আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে সাইয়্যেদ আব্দুল্লাহ লেখেন, “রাজসাক্ষী হিসাবে মামুন যদি হাসিনা থেকে শুরু করে অন্যান্য কুশীলবদের বিরুদ্ধে মুখ খোলা শুরু করে, তাহলে বহু মানুষের বহু গোপন অপকর্মের কথা ফাঁস হয়ে যেতে পারে—হয়ত এখনও যেগুলো সামনে আসে নাই। অতএব অন্যরা সংঘবদ্ধভাবে চেষ্টা চালাতে পারে মামুনকে শেষ করে দেওয়ার জন্য, যাতে করে সে ওইসব সাক্ষী না দিতে পারে।”
উল্লেখ্য, সাবেক আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বৃহস্পতিবার ট্রাইবুনালে গিয়ে নিজে থেকেই রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। সাইয়্যেদ আব্দুল্লাহ এই ঘটনাকে একটি ‘ভালো খবর’ হিসেবে অভিহিত করলেও, একই সঙ্গে তিনি নিরাপত্তা ঝুঁকির দিকটিকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, “হাসিনা আমলের কুকীর্তি ফাঁস করতে আজকে ট্রাইবুনালে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন জানিয়েছে মামুন, এটা নিঃসন্দেহে ভালো খবর। তবে আমার ভাবনাটা অন্য জায়গায়।”
তার মতে, এখন সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো মামুনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কারণ, রাষ্ট্রীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে এখনো অনেক ‘স্বৈরাচার এম্প্যাথাইজার’ বা পুরোনো আদর্শে বিশ্বাসী কর্মকর্তা রয়ে গেছেন।
তিনি আরো লিখেছেন, “তাই মামুনকে সর্বোচ্চ লেভেলের কাস্টোডিয়াল নিরাপত্তা দেওয়া উচিৎ। যদ্দূর অনুমান করতে পারি, পুলিশের ইন্টারনাল কমান্ড স্ট্রাকচার এখনও ঠিকঠাক রিবিল্ড করা যায় নাই। এজন্যই রাজসাক্ষী হওয়ার কথা শুনে শুধু খুশি হলেই চলবে না, বরং এসোসিয়েটেড যেইসব রিস্ক ফ্যাক্টর আছে, সেগুলোকেও যাতে পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, সেই উদ্যোগও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নিতে হবে।”
সাইয়্যেদ আব্দুল্লাহর এই স্ট্যাটাস ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে তীব্র আলোড়ন তুলেছে। কেউ কেউ মামুনের সাহসের প্রশংসা করছেন, কেউ বা তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। একই সঙ্গে সরকারের ভূমিকা ও রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের নিরপেক্ষতা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি সাবেক আইজি যদি সত্যিই রাজসাক্ষী হিসেবে আদালতে বক্তব্য রাখতে শুরু করেন, তাহলে তা যে শুধুই আইনি ঝড় নয়, রাজনৈতিক ময়দানে বড়সড় চমক হিসেবেও দেখা দিতে পারে—এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।