সোহাগ হত্যাকাণ্ড: প্রকৃত আসামিদের বাদ দেওয়ার অভিযোগে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে পরিবারের ক্ষোভ

সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের মামলার এজাহার থেকে বাদ দিয়ে নির্দোষদের আসামি করার অভিযোগ তুলেছে নিহতের পরিবার ও বিএনপিপন্থী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল (Jatiyatabadi Jubo Dal)। সংগঠনের সভাপতি এম মোনায়েম মুন্না এ ঘটনাকে ‘রহস্যজনক’ ও ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তার অভিযোগ, যারা সিসিটিভি ফুটেজ ও ভিডিওতে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত হিসেবে চিহ্নিত, তাদের নাম মামলার প্রধান আসামি করা হয়নি এবং আজও তারা গ্রেপ্তার হয়নি।

এম মোনায়েম মুন্না বলেন, “হত্যায় জড়িতদের ভিডিও ফুটেজ ও সিসিটিভি ফুটেজ থাকা সত্ত্বেও এজাহারে তাদের নাম নেই—এটা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। পুলিশ কী উদ্দেশ্যে এমন করেছে, সেটি আমাদের বোধগম্য নয়।”

নিহত সোহাগের মেয়ে মিম অভিযোগ করেন, মামলার খসড়া এজাহারে প্রকৃত তিন আসামি (১৭, ১৮ ও ১৯ নম্বর) ছিলেন। তিনি নিজে সেই খসড়া দেখেছেন এবং ছবি তুলে রেখেছেন। কিন্তু পরে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, খসড়ায় সংশোধন আনা হবে, যদিও সেটি করা হয়নি। উল্টো, তার মাকে (বাদী মঞ্জুয়ারা বেগম) একা ডেকে নিয়ে নতুন একটি নথিতে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়া হয়, যেখানে প্রকৃত খুনিদের নাম বাদ দেওয়া হয়।

মিম বলেন, “আমি পুলিশকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমার বাবাকে যেহেতু অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়েছে, সেই অস্ত্রের কথা কেন এজাহারে নেই? তারা বলেছিল, সংশোধন হবে। কিন্তু পরে বুঝলাম, ওরা আলাদা কাগজে সই করিয়েছে।”

বাদী মঞ্জুয়ারা বেগমও অভিযোগ করেন, “ভাইয়ের মৃত্যুতে আমি তখন ভীষণ ভেঙে পড়েছিলাম। মেয়েকে কপি চেক করতে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, যেটা সে দেখেছে, সেটাতেই সই করছি। কিন্তু পরে বুঝলাম, নতুন নথিতে সই করানো হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “এই ঘটনায় রাজনীতি হয়েছে। যারা আসল খুনি, তাদের বাদ দেয়া হয়েছে। আমি ঢাকা গিয়েও পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আশ্বাস দিয়েছে—ব্যাপারটা ঠিক করবে।”

পরিবারের অভিযোগ, পুরো মামলাটি ‘হালকা’ করার চেষ্টা চলছে। শুরুতেই পুলিশ মামলাটি গ্রহণে গড়িমসি করেছিল বলেও দাবি তাদের। মামলার খসড়া থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে আসামিদের বাদ দিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের বাঁচানো এবং নিরপরাধদের ফাঁসানো হয়েছে বলেও তারা অভিযোগ করেছেন।

তবে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (OC Moniruzzaman Monir) পাল্টা বক্তব্যে বলেন, “এজাহার তো বাদীই দেয়। পুলিশ চেঞ্জ করে না। তারা নিজেরা ১০-২০ জন একসঙ্গে বসে দেখেছে, বুঝে শুনেই দিয়েছে। তারা কি অশিক্ষিত? না কি মুর্খ? এমন বলা ঠিক না। তারা পড়েছে, দেখেছে—সব বুঝে সই করেছে। আমাদের কিছু বলার নেই।”

ওসির বক্তব্যে বিষয়টিকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই দেখানো হয়েছে, তবে পরিবারের সদস্যরা বারবার বলছেন—পুলিশ কৌশলে তথ্য গোপন ও বিকৃতি করেছে। এমনকি ওসি নিজেই বাদীর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কক্ষে কথা বলার অভিযোগও এসেছে।

এই ঘটনার বিচার নিয়ে পরিবারের মধ্যে এক গভীর হতাশা বিরাজ করছে। তাদের দাবি, দ্রুত প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তার এবং ন্যায্য বিচার নিশ্চিত না হলে এই বিচার ব্যবস্থার ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা আরও কমে যাবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *