দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় অবশেষে বিচার কার্যক্রম শুরু হলো যুবলীগ দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট (Ismail Hossain Chowdhury Samrat)-এর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক মো. জাকারিয়া হোসেন অভিযোগ গঠন করে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আদালতে অনুপস্থিত থাকার কারণে তার জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে।
বেঞ্চ সহকারী জাহিদুর রহমান জানান, সম্রাট আদালতে উপস্থিত না থাকায় বিচারক অভিযোগ গঠনের সময় তার জামিন বাতিল করেন। এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ ১৭ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়েছে।
সম্রাটের পক্ষে তার আইনজীবী অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য সময় চাইলেও আদালত সেই আবেদন নামঞ্জুর করে সরাসরি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
দুদকের মামলার ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন এবং পরবর্তীতে তিনিই মামলার তদন্তভারও গ্রহণ করেন। ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়।
সম্রাটের বিরুদ্ধে ওঠা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সূত্রপাত ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকার মতিঝিল এলাকার ক্লাবপাড়ায় র্যাবের ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের মাধ্যমে। অভিযানের খবরে সম্রাট আত্মগোপনে চলে যান। পরে ৭ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে র্যাব তার সহযোগী এনামুল হক আরমান (Enamul Haque Arman)-সহ তাকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের পর কাকরাইলের ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে সম্রাটের অফিসে র্যাব অভিযান চালায়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টার এই অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, গুলি, ১১৬০টি ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া ও ‘নির্যাতনযন্ত্র’ উদ্ধার করা হয়। এই চাঞ্চল্যকর অভিযানের পর সম্রাটকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পাশাপাশি রমনা থানায় তার বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র আইনে আরও দুটি মামলা দায়ের হয়।
এইসব মামলায় একাধিকবার জামিন পেলেও সম্রাট দীর্ঘদিন ছিলেন কারাগারে। ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল থেকে ১১ মে’র মধ্যে চার মামলাতেই জামিন পান তিনি এবং কারাগারে কাটানো প্রায় ৩১ মাস পর মুক্তি পান। এরপর ২২ অক্টোবর তার পক্ষে স্থায়ী জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়, যদিও দুর্নীতি দমন কমিশন (Anti-Corruption Commission) এর বিরোধিতা করে।
পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ১ জুন উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তাকে এক মাসের জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয় ও জামিন বাড়িয়ে ৬ জুলাই পর্যন্ত মঞ্জুর করা হয়। এরপর আরও কয়েক দফায় তার জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়।
তবে এবার আদালতে অনুপস্থিত থাকায় তার আগের সুবিধাগুলো স্থগিত হয়ে নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মুখে পড়লেন একসময়ের আলোচিত এই রাজনৈতিক নেতা।