সরকারি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র ছিলেন মাহমুদুর রহমান সৈকত। চব্বিশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই (শুক্রবার) তার আহত বন্ধুকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে মা-বাবার অনুমতি নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পরেই অর্থাৎ বন্ধুর কাছে পৌঁছানোর আগেই পুলিশি গুলিতে শহীদ হন তিনি। শহীদ হওয়ার এ দিনে তার বড় বোন সাবরিনা আফরোজ শাবন্তি তাকে নিয়ে ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
সাবরিনা আফরোজ শাবন্তি ও তার বোন শাহরিনা আফরোজ তাদের আদরের একমাত্র ভাইকে টুনা বা টুনাপোকা বলে ডাকতেন। এ নিয়ে ভাই অভিমানও করতেন। সেই টুনাকে শাবন্তি কিছু প্রশ্ন করেছেন। ফেসবুকে প্রশ্ন করে তিনি লেখেন, গোটা একটা বছর তোকে ছাড়া কাটিয়ে দিলাম টুনা! ৩৬৫ দিন! গতবছর এই দিনে আনুমানিক বিকেল ৫টার দিকে জানতে পারলাম তুই নাকি মরে গেছিস! কি অদ্ভুত! তোর কি মরার বয়স হইছে?
সাবরিনা আফরোজ শাবন্তির ফেসবুক পোস্টটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল:
গোটা একটা বছর তোকে ছাড়া কাটিয়ে দিলাম টুনা!
৩৬৫ দিন!
গতবছর এই দিনে আনুমানিক বিকেল ৫ টার দিকে জানতে পারলাম তুই নাকি মরে গেসিস!
কি অদ্ভুত!
তোর কি মরার বয়স হইসে?
আমি খালি চিৎকার করতেসিলাম, বলতেসিলাম ডাক্তার দেখাইতে, ভাবতেসিলাম ডাক্তার ঔষধ দিলে তুই ঠিক হয়ে যাবি, বারবার জিজ্ঞাসা করতেসিলাম সবাইকে, তুই কি আসলেও আর উঠবিনা?
মনে হচ্ছিলো দম নিতে পারতেসিনা, চিৎকার করে কানতেসিলাম আর বলতেসিলাম, আল্লাহ, আম্মুরে কি বলবো আমি? তোকে ছাড়া থাকবো কেমনে?
কিন্তু দেখ, গোটা একটা বছর তোকে ছাড়া কাটিয়ে দিলাম টুনা!
আমি এত গাধা, হাসপাতালে তোর এত কাছে থেকেও তোকে একটাবার ধরে দেখিনাই, ভয় পাচ্ছিলাম, মনে হচ্ছিলো তুই ব্যথা পাবি!
আমি কি গাধা, মানুষ মরে গেলে ব্যাথা পায় নাকি?
প্রতিদিন ঘরে ঢুকার আগে মনেহয়, এই বুঝি ঘরে ঢুকে দেখবো সব ঠিক হয়ে গেসে, সব আগের মত, তুই চলে আসছিস!!
রাস্তায় তোর বয়সি ছেলে দেখলেই মুখের দিকে তাকায়ে থাকি, আচ্ছা নাকটা মিলে? কপালটা মিলে?হাসিটা মিলে? হাটাটা তোর মত না?
এত মানুষ দেখি, তোকে দেখিনা!
মানে এই যে এত বড় মানুষটা একেবারে যেন উবে গেলি!
একবার তোকে ইন্সটাগ্রামে একটা রিল পাঠাইসিলা- ভাই এর সাথে খারাপ ব্যবহার করি, কিন্তু মনে তার জন্য এক পৃথিবী ভালোবাসা আছে’-তুই এমন টিটকারি দিসিলি আমারে, বলতেসিলি আমি তোকে ভালোবাসি না মোটেও, খালি ঝগড়া করি!এখন শান্তি লাগে যে অন্তত তোকে একবারের জন্যেও বলসিলাম তোকে অনেক ভালোবাসি!
তোকে আসলেও অনেক ভালোবাসি টুনা!
সবার কাছে তুই সৈকত, শহীদ মাহামুদুর রহমান সৈকত, কিন্তু আমার কাছে টুনা!
সবসময় টুনা!
প্রসঙ্গত, সৈকতকে আগে থেকেই নজরদারিতে রেখেছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার। মিছিলের সামনে থাকা সৈকতকে কয়েক ফুট দূর থেকে সরাসরি মাথায় গুলি চালানো হয়, যা এক তরুণের স্বপ্নকে চিরতরে থামিয়ে দেয়। পরে শহীদ সৈকতের মা-বাবা খুনির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে চাইলেও পুলিশের কাছ থেকে যথেষ্ট সহায়তা পাননি।