নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা নিয়ে বিভ্রান্তি: রাজনৈতিক দলগুলোর ঘোষণা বনাম প্রধান উপদেষ্টার প্রেস টিমের নীরবতা

জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে শুরু হয়েছে তথ্যের ভিন্নমত ও প্রশাসনিক নীরবতার দ্বন্দ্ব। শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় (Jamuna State Guest House) অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে একে একে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা জানালেন—প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus) আগামী চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করবেন। অথচ তার প্রেস টিম এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য দিতে রাজি হয়নি। প্রেস সচিবের ফোনে যোগাযোগ করেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এমনকি বৈঠক পরবর্তী প্রেস বিজ্ঞপ্তিতেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই।

এই নীরবতা রাজনৈতিক অঙ্গনে জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়েছে। তিনটি দলের নেতা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সরকারপ্রধান নির্বাচনের সময়সূচি জানিয়ে দেবেন চার-পাঁচ দিনের মধ্যে। একটি দল দাবি করে, তিন-চার দিনের মধ্যেই এই ঘোষণা আসবে। আরেকটি দলের মতে, ৫ আগস্টের আগেই তারিখ ঘোষণা করা হবে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার দফতর এ বক্তব্য না মেনে নিচ্ছে, না প্রত্যাখ্যান করছে—শুধু বলেছে, তিনি “কয়েক দিনের” কথা বলেছেন।

জাতীয় পার্টি (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, “আলোচনার সবচেয়ে গঠনমূলক দিক ছিল প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা—তিনি চার-পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচনের সময় জানাবেন। দেশের চলমান অস্থিরতা নিরসনের একমাত্র পথ নির্বাচন, সরকার তা বুঝেছে।”

ববি হাজ্জাজ জানান, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, “নির্বাচনের রোডম্যাপ হয়ে গেছে, কয়েক দিনের মধ্যে সময়ও জানানো হবে।” তিনি আরও দাবি করেন, বৈঠক শেষে প্রেস উইংয়ের সঙ্গে আলোচনায় ধারণা পাওয়া গেছে—৫ আগস্টের মধ্যেই তারিখ ঘোষণা করা হবে।

তবে এ বক্তব্যকে ঘিরে দ্বন্দ্ব এখন স্পষ্ট। একদিকে রাজনৈতিক নেতারা জনসমক্ষে যা বলছেন, অন্যদিকে প্রশাসনিক পক্ষের অস্পষ্টতা সেই বক্তব্যকে অস্বস্তিকর রকমের ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।

এদিকে বৈঠকে উঠে আসে গোপালগঞ্জের সহিংসতা, মাইলস্টোন স্কুলের বিমান দুর্ঘটনা এবং সচিবালয়ের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রসঙ্গ। এসব বিষয় পর্যালোচনা করেই প্রধান উপদেষ্টা নাকি “কয়েক দিনের মধ্যে” সময়সূচি জানাবেন বলে জানান বিশেষ সহকারী মনির হায়দার

এখানে প্রশ্ন উঠছে—যখন নির্বাচন নিয়ে এত স্পষ্ট বার্তা দলগুলো জনসমক্ষে জানাচ্ছে, তখন প্রেস টিমের এমন নীরবতা কেন? সেটি কি কোনো কৌশলগত দ্বিধা, নাকি অভ্যন্তরীণ মতবিরোধের ইঙ্গিত?

একই দিনে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য জোরদারের ডাক দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ঠেকানো যাবে না।” কিন্তু তাঁর প্রেস টিমের এমন গোপনীয়তা সেই অগ্রযাত্রার সংকেত না হয়ে উল্টো ধোঁয়াশা তৈরি করছে বলে মত বিশ্লেষকদের।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *