“সংস্কার কেবল কাগজে-কলমে নয়, মনের গভীরতর স্তরে না হলে, যে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমরা লড়ছি সে আবার ফিরে আসবে”—এই সতর্ক বার্তাই দিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)। মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতিসংঘ মানবাধিকার মিশন আয়োজিত ‘জুলাই বিপ্লবের এক বছর’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় রাজনীতিতে চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, “সংস্কার মানে শুধু কয়েকটা কাগজে বদল নয়। আমাদের সংস্কার করতে হবে মনের গভীর স্তরে। যদি সেই গভীরতম পরিবর্তন না আসে, তবে আজ যেই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কথা বলছি, কাল সে আবার ফিরে আসবে—যতই প্রতিরোধ করি না কেন।”
‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যেন আর কখনো নিপীড়নের অস্ত্র না হয়’
জুলাই গণহত্যার বিচার প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই বিচার এমনভাবে হবে যেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে কখনো নীরবতা দমন বা দেশের জনগণকে ধ্বংস করা না যায়।”
তিনি স্পষ্ট করে জানান, শুধু বিচারের জন্য শাস্তি নয়, বরং একটি ‘নিশ্চয়তা’ প্রতিষ্ঠা করাই লক্ষ্য—রাষ্ট্রের ক্ষমতা আর যেন জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার না হয়।
জাতীয় ঐকমত্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন
রাষ্ট্রব্যবস্থায় স্থায়ী পরিবর্তনের জন্য তিনি বললেন, “রাজনৈতিক ব্যবস্থা গঠনের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য গড়ার চেষ্টা চলছে। এই ঐকমত্য নিশ্চিত করবে এমন একটি ব্যবস্থার জন্ম, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক এবং সর্বোপরি বিশ্বাসযোগ্য একটি নির্বাচন নিশ্চিত করবে।”
তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য একটাই—একটি বাংলাদেশ গঠন করা, যেখানে প্রতিটি নাগরিক শান্তিতে, মর্যাদায়, গর্বে ও স্বাধীনতায় বাঁচতে পারে।”
ইতিহাসের পাশে জাতিসংঘ
জাতিসংঘের মানবাধিকার মিশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা সংকট, এমনকি গত বছরের জুলাই-আগস্টের সংকটেও জাতিসংঘ সবসময় বাংলাদেশের পাশে ছিল।”
জাতিসংঘ মানবাধিকার মিশনের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি মূলত জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও তার প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার সংস্কারের প্রয়োজনীয়তাকে কেন্দ্র করেই অনুষ্ঠিত হয়।
গভীরতর বার্তা
এদিনের বক্তব্যে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে—প্রধান উপদেষ্টার মতে বাংলাদেশের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো মনস্তাত্ত্বিক ও কাঠামোগত সংস্কার। কেবল আইনি সংস্কার বা প্রশাসনিক পরিবর্তন নয়, জনগণের মনন ও রাষ্ট্রীয় নীতির কেন্দ্রে মানবিকতা, জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে, সেই পুরোনো দানব আবার ফিরে আসবে।