‘জুলাই সনদ’-এর খসড়া নিয়ে বিএনপি (BNP) দলের পক্ষ থেকে মৌলিক ঐকমত্যের কথা জানানো হয়েছে। তবে খসড়ার কিছু বাক্য, শব্দচয়ন ও গঠন কাঠামো নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে ভাষাগত ও গঠনগত কিছু সংশোধনী জমা দেওয়া হবে বলে জানালেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ (Salahuddin Ahmed)। তিনি বলেন, “অঙ্গীকারের বিষয়ে আমরা একমত, তবে কিছু ভাষাগত সংশোধনী প্রস্তাব থাকবে।”
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে ২১তম দিনের সংলাপের মধ্যাহ্ন বিরতির পরে তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন জানান, বিএনপি তাদের সংশোধনী আগামীকালই জমা দেবে। তিনি বলেন, “সনদে দুই বছরের মধ্যে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের যে অঙ্গীকার রাখা হয়েছে, তা আমরা সমর্থন করি। এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে যদি সংবিধান বা আইনের পরিবর্তন প্রয়োজন হয়, সেজন্যই তো কমিশনের এই প্রক্রিয়া।”
সংস্কার কমিশনের ৭০০টিরও বেশি সুপারিশের মধ্যে বিএনপি ৬৫০টির মতো সুপারিশে একমত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বাকি সুপারিশগুলো নিয়ে আমরা পরামর্শ বা বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছি। তবে সব প্রস্তাব সনদে আসবে না, বরং সংবিধান সংশোধনের মতো মৌলিক প্রস্তাবগুলোই সেখানে ঠাঁই পাবে।”
জনগণের সার্বভৌমত্বের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করে সালাহউদ্দিন বলেন, “জনগণই রাষ্ট্রের মালিক। জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা পার্লামেন্টে প্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রয়োগ হয়। আইন প্রণয়ন পার্লামেন্টেই হতে হবে, যদি আমরা সত্যিই জনগণের সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করি।”
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ সম্পর্কে বিএনপির অবস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন বাদে বাকি সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ আইনগত কাঠামোর মধ্যে হওয়া উচিত। এতে আইনি সমস্যা দেখা দিলে সহজে সংশোধন করা যাবে।”
কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য তিনি একটি সক্রিয় নির্বাহী বিভাগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন, তবে সেটি যেন ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’-এর মধ্যে থাকে, সে কথাও স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, “যত বেশি বিষয় সংবিধানে ঢোকানো হবে, তত বেশি সংশোধন কঠিন হবে। তাই আমরা চাই প্রতিষ্ঠানগুলো আইনের মাধ্যমে শক্তিশালী হোক।”
সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিয়ে বিএনপির প্রস্তাব অনুযায়ী, আগামী নির্বাচনে ৫ শতাংশ (১৫টি আসন) এবং পরবর্তী নির্বাচনে ১০ শতাংশ (৩০টি আসন) নারীদের জন্য সরাসরি মনোনয়ন নির্ধারিত থাকবে। সালাহউদ্দিন বলেন, “আমরা চাই নারীরা সরাসরি নির্বাচিত হোক, কিন্তু বাস্তবতা বিবেচনায় ধাপে ধাপে এগোতে হবে।”
ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে তিনি বলেন, “ন্যায়পাল এখনও কার্যকর নয়। প্রথমে এটিকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে, এরপর আইন যুগোপযোগী করে, দায়িত্ব-ক্ষমতা স্পষ্ট করে বাস্তব প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তদন্তের ক্ষমতা থাকলেই চলবে না, সেই প্রতিবেদন বাস্তবায়নযোগ্য করতে হবে।”