সরকারের যে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের যাত্রাপথকে সঙ্কটে ফেলতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারেক রহমান (Tarique Rahman)। বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে ঢাকার আশুলিয়ায় অনুষ্ঠিত বিএনপির (BNP) এক প্রতিবাদ সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, “আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে পরাজিত ফ্যাসিবাদী অপশক্তি রাষ্ট্র রাজনীতিতে ফিরে আসার সুযোগ নিতে ওঁৎ পেতে রয়েছে। সরকারের যে কোনো ভুল পদক্ষেপে দেশ আবার চরমপন্থা ও উগ্রবাদের দিকে ধাবিত হতে পারে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তাই চূড়ান্ত সতর্ক থাকতে হবে।”
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় আশুলিয়া থানা সংলগ্ন স্থানে নিহতদের স্মরণে এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা জেলা বিএনপি। ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে নিহতদের লাশ ভ্যানে করে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দায়ের করা মামলাটি বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে।
‘নাগরিকের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা জরুরি’
তারেক রহমান বলেন, সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে জনগণের মতামতের মুখাপেক্ষী করে তুললেই রাজনৈতিক সংস্কার সম্ভব। “গণমানুষ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মালিক—এই সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। কেউ জনপ্রতিনিধি হতে চাইলে তাকে অবশ্যই জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে,” বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “কয়েকজন মানুষের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা তুলে দেওয়ার জন্য জনগণ দীর্ঘ দেড় দশক আন্দোলন করেনি। ফ্যাসিবাদ হটিয়ে জনগণ রাষ্ট্রে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। সেই শহীদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানাতে হলে সরকার পরিচালনায় নাগরিকের কথা শুনতেই হবে।”
আন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একাংশের দিকে ইঙ্গিত করে তারেক বলেন, “মাঝেমধ্যে শোনা যায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু অংশ নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। এতে জনগণের আস্থায় চিড় ধরার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।”
বিএনপি শিক্ষাঙ্গন, স্থানীয় সরকার ও জাতীয় সংসদে জনগণের ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচনের পক্ষে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। “কিন্তু সরকার কি সত্যিই এই নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং অগ্রাধিকারে গুরুত্ব দিচ্ছে? এটি এখন জনগণের জন্য বড় প্রশ্ন।”
‘শহীদদের সম্মানে স্থাপনার পরিকল্পনা’
তারেক রহমান শহীদ পরিবারগুলোর প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা ও দায়বদ্ধতার কথা উল্লেখ করে বলেন, “শহীদ মানে শুধুই একটি সংখ্যা নয়। এটি একটি পরিবারের স্বপ্নভঙ্গ। একটি জীবনের অবসান। আমাদের করণীয় হলো—তাদের আত্মত্যাগকে অর্থবহ করে তোলা।”
তিনি ঘোষণা দেন, “বিএনপি যদি আগামী জাতীয় নির্বাচনে জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায়, তাহলে সাভার–আশুলিয়া বা অন্য কোনো সুবিধাজনক স্থানে শ্রমজীবী শহীদদের স্মরণে একটি বিশেষ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে।”
তারেক আরও বলেন, “আল্লাহ যেন প্রতিটি আত্মত্যাগকে শহীদি মৃত্যু হিসেবে কবুল করেন। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।”
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় আয়োজিত এই সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir), স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহ-পরিবার কল্যাণ সম্পাদক দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন বাবু, ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক।
শহীদ পরিবারের মধ্যে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন: বাবুল হোসেনের স্ত্রী লাকি আখতার, আরাফাত মুন্সির বাবা স্বপন মুন্সি, বায়েজিদ মুস্তাফিজের স্ত্রী রিনা আখতার, শ্রাবণ গাজীর বাবা আবদুল মান্নান গাজী, মামুন খন্দকার বিপ্লবের স্ত্রী খন্দকার সাথী, সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম, আরাফুর রহমান রাসেলের ভাই সায়েদুর রহমান বাবু এবং পঙ্গু শহীদ শান্ত।