ঢাকা (Dhaka)—রাজধানীর গুলশানে সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের পরিবারের কাছ থেকে চাঁদাবাজির ঘটনার আগেই একই কায়দায় আরেক সাবেক সংসদ সদস্যের অফিসে হানা দিয়ে ৫ কোটি টাকার চেক আদায় করেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বহিষ্কৃত নেতা আব্দুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান রিয়াদ ও তার সহযোগীরা।
ঘটনাটি ঘটে গত ২৬ জুন, রাজধানীর গ্রিন রোডে আওয়ামী লীগের (Awami League) সাবেক এমপি আবদুল কালাম আজাদ (Abdul Kalam Azad) পরিচালিত একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। অভিযোগে বলা হয়, সমন্বয়ক পরিচয়ে রিয়াদের নেতৃত্বে ছয়জন ওই প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে, সাবেক এমপির মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় এবং নিজেদের ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ বলে পরিচয় দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদার দাবি তোলে। অফিসে নগদ টাকা না থাকায় তারা ড্রয়ার থেকে চেক বই বের করে ৫ কোটি টাকার ১১টি চেক লিখে নেয়।
এই বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ও এমপির শ্যালক সাইফুল ইসলাম জানান, চাপে পড়ে সাবেক এমপি চেক দিতে বাধ্য হন, তবে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তা ক্যাশ করা সম্ভব হয়নি। সাইফুল আরও জানান, শিগগিরই এই ঘটনায় মামলা করবেন।
এদিকে গুলশান থানা-পুলিশ রিয়াদের বাসা থেকে উদ্ধার করেছে প্রায় ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার ৪টি চেক। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির (DMP) মিডিয়া সেন্টারের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
চেক আদায়ের ঘটনায় কলাবাগান থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন নিউমার্কেট-কলাবাগান জোনের সহকারী কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশ বলছে, শুধু সাবেক এমপিদের নয়—গুলশান, বনানী, বাড্ডা এলাকাতেও এ চক্রের সদস্যরা চাঁদা আদায়ের চেষ্টা চালিয়েছে।
২৬ জুলাই সন্ধ্যায় গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডের একটি বাড়ি থেকে ১০ লাখ টাকা নেওয়ার পর আরও ৪০ লাখ টাকা দাবি করতে গেলে হাতেনাতে ধরা পড়ে রিয়াদসহ পাঁচজন। আটককৃতরা হলো: সাকাদাউন সিয়াম (২২), সাদমান সাদাব (২১), আমিনুল ইসলাম (১৩), ইব্রাহীম হোসেন (২৪) এবং রিয়াদ (২৫)। তাদের মধ্যে রিয়াদ নোয়াখালীর (Noakhali) সেনবাগ উপজেলার বাসিন্দা এবং ঢাকার ধানমন্ডির নিউ মডেল এলাকায় বসবাস করেন।
এই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় রিয়াদ, ইব্রাহীম হোসেন, সিয়াম ও সাদাবকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
অভিযোগে বলা হয়, ১৭ জুলাই সকাল ১০টায় রিয়াদ ও তার সহযোগী অপু, গুলশানে শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার দাবি করেন। পরবর্তীতে ভয়ভীতি দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা আদায় করেন তারা। এরপর ২৬ জুলাই পুনরায় ৪০ লাখ টাকা আদায়ের চেষ্টা করতে গিয়ে পুলিশি অভিযানে ধরা পড়েন।
চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (Anti-Discrimination Student Movement) রিয়াদসহ তিনজনকে বহিষ্কার করে এবং কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া দেশের সব কমিটি স্থগিত ঘোষণা করে সংগঠনটি।
এই চক্রের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, এবং তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, অভিযোগগুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ আসতে শুরু করেছে, যার ভিত্তিতে আরও মামলা হতে পারে।