টিভি উপস্থাপক ও সাংবাদিক জিল্লুর রহমান বলেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির বাতাসে হঠাৎ করেই এক পুরনো, চেনা অথচ অপব্যক্ত বাস্তবতা হানা দিয়েছে। ছাত্রশিবির থেকে উঠে আসা কিছু তরুণ কিভাবে ছাত্রলীগের মধ্যে ঢুকে ছাত্রলীগের চেয়েও বেশি ছাত্রলীগ নামে নিপীড়ন চালিয়েছেন। আবার আজ ফিরে গেছেন তাদের আসল পরিচয়ে।’
সম্প্রতি ‘মন্তব্য’ নামক এক ফেসবুক পেজে দেওয়া ভিডিওর রাজনৈতিক বিশ্লেষণে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আবদুল কাদেরের সাম্প্রতিক একটি ফেসবুক পোস্ট বেশ আলোচনা সৃষ্টি করেছে। ফেসবুকে পোস্টটি যেন এই দ্বৈত চরিত্রের শিবির এবং জামায়াতের মুখোশ খুলে দিয়েছে তার এই পোস্ট কেবল একটা ব্যক্তির নাম বলেই থেমে যায়নি। বরং একটা গোটা সংস্কৃতির গুপ্তপ্রবণতার কথায় যেন উন্মোচন করেছেন।’
আরো পড়ুন
জবি প্রেস ক্লাবের উপদেষ্টা হলেন নজরুল ইসলাম
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতিতে এক ধরনের কালচার বা সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল।
বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল রুমগুলোতে। হলগুলোতে গেস্টরুম কালচার মারধরের রাজনীতিতে মিছিলের নামে জোর জবরদস্তি আর গায়ের জোর দেখানোর অশোভন একটা প্রতিযোগিতা। অথচ এসব কাজের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অনেকের নিজের রাজনৈতিক আদর্শিক শিকড় ভিন্ন খাতে গাঁথা। ছাত্রশিবিরের রাজনীতি করা ছেলেরা যখন ছাত্রলীগে এসে পড়ে।
তখন তারা পরিচয় রক্ষা করতে গিয়ে চরম উগ্রতা, অর্থাৎ তারা যে ছাত্রলীগ, সেটা বোঝানোর জন্য অতিরিক্ত তোষামোদ আর নিপীড়নের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। এটি বারবার উঠে এসেছে আবদুল কাদেরের বক্তব্যে যে বিগত শাসনামালে শেখ হাসিনার শাসনামলে কিভাবে শিবির ছাত্রলীগ হয়ে ছাত্রলীগের চেয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করেছে।’
এই সাংবাদিক বলেন, ‘আব্দুল কাদের তার পোস্টে অনেকের নামই উল্লেখ করেছেন, যাদের মধ্যে কেউ কেউ একসময় ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদে থেকেছেন আবার কেউ এখন শিবিরের নেতা হিসেবে সক্রিয়। এদের কেউ কেউ গেস্ট রুমের কুখ্যাত নির্যাতক। আবার এখন শিবিরের সাংগঠনিক মিটিংয়ে নিজেকে প্রকাশ করে সদস্য হিসেবে কেউ নিজের নামের শেষে সাঈদী থাকার কারণে ছাত্রলীগের পদ না পেয়ে নাম পরিবর্তন করেন।
কিন্তু অবশেষে ফেরত যান নিজের পুরনো ঘরে, পুরনো নামে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখানে কেবল ব্যক্তি নয়, গোটা সিস্টেমের একটা দায় আছে। যদি একটা রাজনৈতিক দল বা সংগঠন তার ভেতরে প্রবেশকারী এজেন্টদের চিনতে না পারে কিংবা কোনো সংগঠন বা দল যদি নিজের লোকদের অন্য দলের মধ্যে ভিড়িয়ে দেয়, কিংবা কেউ চিনেও তার দৌরাত্ম্যকে প্রশ্রয় দেয়। তাহলে তাকে কেবল প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র নয়, শিবিরের নৈতিকতা সংকট এবং ছাত্রলীগের নৈতিকতা সংকট তো ছিলই। এই যে একটা দলে অন্যরা ঢুকে পড়ছে। ঢুকে নানা রকমের অপকর্মে যুক্ত হচ্ছে। সেটা এক ধরনের সাংগঠনিক ব্যর্থতা। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রশাসনিক সরকারের ব্যর্থতা বলা যেতে পারে।’
আরো পড়ুন
বিএনপির বন্দরে নোঙর করছেন ড. ইউনূস, ভেঙে গেছে এনসিপি : ড. মনজুর
জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে যারা নির্যাতনে লিপ্ত হয়েছেন তারা কেবল ছাত্রলীগকেই নয়। ছাত্ররাজনীতিকে কলঙ্কিত করেছেন। আর শিবিরও এই কলঙ্কের দায়ভার এড়াতে পারে না। আরেক দিকে এই ইস্যু উঠে এসেছে এমন এক সময়ে, যখন জাতি এখনো আহত হয়ে আছে। গত বছরের সেই নির্মম জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতিতে শিশুদের গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর যে মিছিল তার বিচার আজও হয়নি। একের পর এক গ্যাজেট আসে লিস্ট হয় আবার বাতিল হয়। কানো নাম দুইবার আসে, কারো পরিচয় মেলে না। ঢাকার রায়ের বাজারের গণকবরে পড়ে থাকা নামহীন লাশগুলো যেন আমাদের শোকের চেয়েও বড় এক ব্যর্থতা চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।’
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল বলেছেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে আজ বৃহস্পতিবার মোহাম্মদপুরের নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য থাকাকালীন তার কিছু কর্মকাণ্ডের কারণে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সেই সব অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নিজের ফেসবুক পেজ ‘কথা’য় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি আরো বলেন, আমি এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলছি, কারণ কয়েকজন দর্শক আমার একটি ভিডিওতে এ নিয়ে মন্তব্য করেছেন।
এসব মন্তব্য করা হয়েছে আমার ‘অন্যমঞ্চ’ নামক চ্যানেলে। সেখানে আজ ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীর সাক্ষাৎকার প্রচার করেছি। তিনি এনসিপি ও সরকারকে নিয়ে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, সেই ভিডিওর মন্তব্যে বেলাল হোসেন নামের একজন লিখেছেন, ‘অন্যমঞ্চ রেখে নিরাপদে চলে যান।
এবার আপনার পালা কামাল ভাই, কলিমউল্লাহ স্যার কট।’
মাসুদ কামাল বলেন, এখন প্রশ্ন হলো- কলিমউল্লাহ সাহেবের গ্রেপ্তারের সঙ্গে আমার মিল কোথায় পাচ্ছেন তিনি। আমার নামে দুদকে কোনো মামলা নেই। আমি মামলাহীন ব্যক্তি।
তাহলে আমাকে চলে যেতে হবে কেন? কলিমউল্লাহ সাহেবের সঙ্গে তারা আমার মিল কোথায় পেলেন? মিলটা এক জায়গায় পেয়েছেন। সেটা হলো- কলিমউল্লাহ সাহেব বিভিন্ন টকশোতে বিভিন্ন কথা বলেন, আমিও টকশোতে কথা বলি। তার কথাকে অনেকেই আক্রমনাত্বক মনে করতে পারেন। কিন্তু তিনি আমাকে বলেছেন, তথ্য ছাড়া তিনি কোনো কথা বলেন না।
তিনি বলেন, আমার অন্যমঞ্চ চ্যানেলেও তিনি আসতেন।
গত জুনে যখন দুদকের মামলাটি হয় তখনও তিনি এসেছিলেন। দুদকের মামলায় যে অভিযোগগুলো রয়েছে সেগুলো নিয়েও প্রশ্ন করেছি তাকে। তিনি তার মতো করে উত্তর দিয়েছেন। সেগুলো গ্রহণযোগ্য কিনা তা দর্শকরা বলতে পারবেন। এ নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।
তিনি আরো বলেন, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একজন সাংবাদিক তার ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, ‘গুজবের ফ্যাক্টরি কলিমউল্লাহকে গ্রেপ্তার করায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সাধুবাদ।’ তিনি কলিমউল্লাহ সাহেবকে গুজবের ফ্যাক্টরি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যেহেতু কলিমউল্লাহ সাহেব প্রচুর গুজব ছড়ান, এজন্য তাকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় তিনি ধন্যবাদ দিয়েছেন। তার এই পোস্টটি আমার পছন্দ হয়নি। কারণ গুজবের কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদ ছাড়ার পর কলিমউল্লাহ আওয়ামী লীগ সরকারের প্রচুর সমালোচনা করতেন। তখন তাকে অনেকেই বাহবা দিতো। বর্তমান সরকারের সমালোচনাও তিনি করতেন। এখন আবার তাকে গুজবের ফ্যাক্টরি বলছেন কেউ কেউ।
গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে লেখা পত্রিকাগুলোতে আসছে। কিন্ত গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সাংবাদিকতা কেমন হয়েছে তা নিয়ে তেমন লেখা চোখে পড়েনি। তাই ভাবলাম, এই শিরোনামে একটা লেখা লিখব। কিন্তু সেই লেখাটি আদৌও প্রয়োজন কি না, তা বুঝতে পারছি না।
সাংবাদিকতার মোড়ক পরিবর্তনের যে চেষ্টা থাকার প্রয়োজন, কার্যত আমরা গত এই বছর সেটা দেখতে পাইনি। এমনকি আগের সরকারের সময় যে বিষয় লেখা যেত না বলে আমাদের সাংবাদিকরা অভিযোগ করত, ঠিক সেই বিষয়গুলোও গত এক বছর পাঠকরা ঠিক কতটা পেয়েছে, তা আলোচনার বিষয় হয়ে যেতে পারে।
তবে গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী গণমাধ্যমের ওপর যে আক্রমণ (চাকরিচ্যুত, মামলা, হাঙ্গামা) হয়েছে, তা এই মহাদেশে আর কোনো দেশে এমনটা হয়েছে বলে আমার অন্তত জানা নেই। বিশেষ করে, গণমাধ্যমগুলোতে রাতারাতি দখল করে ও অপেশাদার সাংবাদিকদের হাতে চলে যাওয়ার খেসারত এই জাতিকে দিতে হবে।
গণমাধ্যমগুলোর কণ্ঠরোধ করা কিংবা ভয়ভীতি দেখানোর যে ‘স্বভাব’ শাসকগোষ্ঠীর ভেতর চর্চিত ছিল, সেটাই অভ্যুত্থান-পরবর্তীতেও চর্চিত হয়ে আসছে, যা ছিল প্রত্যাশিত। গতানুগতিক ধারাবাহিকতায় সংবাদ পরিবেশন হচ্ছে, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় এখনো পিছিয়ে।
ইউনূস সরকারের সবচেয়ে মূল্যাবান যে কাজটি করবার কথা ছিল, গণমাধ্যমের সংস্কার। সংস্কার কমিশনের বেশ ভালো ভালো সুপারিশ ছিল, যা বাস্তবায়ন করতে গেলে, কখনোই এই সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলোর মুখাপেক্ষী হতে হতো না, কিন্তু সেটা তারা করতে পারেনি।
বরং গণমাধ্যমগুলোতে ‘মবক্রেসি’ করে যে ভীতকর পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, এবং এখনো যে বিরাজমান তা ‘গণতন্ত্রের’ জন্য হুমকিস্বরূপ। মালিকপক্ষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে, একদল মানুষ সংবাদপত্র দখলের মহোৎসব করেছে।
ফাসিস্টদের দোসর তকমা দিয়ে বহু সাংবাদিকদের মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে নানাভাবে হেনেস্তা করা হয়েছে। ফলে মবদের দাবি মেনে নিয়ে বাড়তি ঝামেলা এড়ানোর জন্য গণমাধ্যমগুলো সেলফ সেন্সরে চলে গিয়েছে। ফলশ্রুতিতে এই দেশের গণমাধ্যমগুলো সেই আগের সময়ের মতোই সরকারের গুণকীর্তন নিয়ে ব্যস্ত।
বিটিভি সেই বাতাবিলেবু চাষ থেকে বের হতে পারেনি। ফলশ্রুতিতে গণমানুষের সংবাদমাধ্যম হওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা ছিল তা পূরণ হতে পারেনি। ফলশ্রুতিতে আগামী দিনেও সংবাদপত্রগুলো কর্তৃত্ববাদীদের ধারায় থাকবে এবং ‘গণতন্ত্র’ উত্তোরণের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে বলে আমি মনে করি
পেশাদার সাংবাদিকদের জন্য সংবাদপত্র না হলে, দলীয় অ্যাক্টিভিস্টদের হাত থেকে সংবাদপত্রগুলো মুক্ত না হলে দেশের অন্যন্য সেক্টেরের মতো পড়তি অবস্থায় থাকবে আমাদের ‘সাংবাদিকতা’। লেজুড়বৃত্তিক সাংবাদিকতার মোড়কে চলা সংবাদমাধ্যমকে যে ‘ক্ষমতাশাহীদের’ হাতের পুতুল হতে পছন্দ করে কিংবা সরকারও তৃপ্তির ঢেকুর তোলে, তা থেকে আপাতত সাংবাদিকতা মুক্ত হচ্ছে না।
লেখক : লেখক ও গবেষক
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, ‘আগামীর বাংলাদেশে কেন আবার সেই বিএনপি, আবার সেই আওয়ামী লীগ, আবার সেই তারেক রহমান, আবার সেই শেখ হাসিনার কথা আসছে।’
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিবের এক আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।
গোলাম মাওলা রনি বলেন, ‘আজকের শিরোনামটি খুব অদ্ভুত বিষয়। এ রকম একটা শিরোনাম করতে হবে, এটি ঠিক এক মাস আগেও আমি কল্পনা করিনি।
অথচ ঠিক চার-পাঁচ মাস থেকেই সমাজের সাধারণ মানুষ কিংবা যারা ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার বা গণমাধ্যমে কথা বলেন, এ রকম অনেকেই টিটকারি করে ঠাট্টা করে মশকরা করে বলে ফেলেছিলেন দেখবেন, শেখ হাসিনা তারেক রহমান সাহেবের আগে বাংলাদেশে চলে আসবেন। এ কথা শুনে খুব সিরিয়াসলি বিএনপির লোকজন বলেছিল, কী সমস্ত কথা বলেন, সবাই তো বলার চেষ্টা করেছিলাম, আগস্ট মাসের ৫ তারিখে বাংলাদেশে আসবেন এবং জুলাই-আগস্ট যে সনদ ঘোষণ করা হবে ওই মঞ্চে তারেক রহমান উপস্থিত থাকবেন।’
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কথাবার্তা কিন্তু এই গত তিন-চার মাস ধরে বলাবলি হচ্ছিল। আমি আসলে কখনো রাগ করিনি গা করিনি।
কিন্তু এখন এই বাস্তবতাটা এত নির্মম হয়ে পড়েছে, এটা নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। এখন এই প্রশ্নটা খুব সিরিয়াসলি ভাবতে হবে, আগামীর রাজনৈতিক সমীকরণে বাংলাদেশে কে আগে আসবেন? শেখ হাসিনা আগে আসবেন, নাকি তারেক রহমান সাহেব আগে আসবেন?’
তিনি আরো বলেন, ‘এ রকম একটা অবস্থা কেন তৈরি হলো বা আমার এ রকম কেন মনে হলো? কেন এখানে জামায়াতের কথা আসছে না? কেন এখানে এনসিপির কথা আসছে না? নাহিদ-আসিফদের কথা আসছে না? ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কথা আসছে না? আগামীর বাংলাদেশে কেন আবার সেই বিএনপি আবার সেই আওয়ামী লীগ, আবার সেই তারেক রহমান, আবার সেই শেখ হাসিনার কথা আসছে।’
রনি বলেন, ‘রাজনীতিতে আসলে কোনো প্রফেসির কোনো স্থান নেই। ওয়ান পারসেন্টও এখানে কোনো প্রফেসি নেই।
আমরা যে বলি, অলৌকিকভাবে এখানে হয়, অমুক ঘরে রাজার জন্ম নেয়, শেষে সে আঁতুরঘরে বেড়ে ওঠে, গোয়ালে বেড়ে ওঠে। তারপর রাজ সিংহাসনের টানে আস্তে আস্তে চলে আসে। এগুলো গল্প বানানো হয় রাজাকে মহিমান্বিত করার জন্য। অথবা পরবর্তী প্রজন্মকে রাজনীতির ব্যাপারে বিমুখ করে পরিবারতন্ত্রকে এবং বংশতন্ত্রকে প্রাধান্য দেওয়ার জন্য এ ধরনের গল্প তৈরি হয়। আসলে রাজার ছেলেকে রাজা হতে হবে।
এ রকম একটা প্রফেসি গল্পতে থাকে। এ রকম অলৌকিক ঘটনা আসলে রাজনীতিতে ঘটে না।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে মনে করতে পারেন, এই রাজনীতিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এলেন কী করে? তিনি তো অলৌকিকভাবে এসেছেন। তার তো কোনো রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা ছিল না, ইচ্ছা ছিল না। কোনো কিছু ছিল না। তিনি এলেন কী করে? এখন এটার জবাব কিন্তু ড. মোহাম্মদ ইউনূস নিজেই দিয়েছেন যে এটা ম্যাটিকুলাসলি হয়েছে, ওয়েল ডিজাইন। তিনি নিঃসন্দেহ ম্যাটিকুলাসের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘রাজনীতিতে আসলে বিজ্ঞান ও অঙ্কের বাইরে কোনো কিছু হয় না। এখন যা কিছু ঘটছে, এই সময়ের যে সফলতা, এই সময়ের যে ব্যর্থতা, এই সময়ে মানুষের যে ক্ষোভ হতাশ এবং মানুষের আহাজারি, সব কিছুকে আপনাকে একত্র করতে হবে। যোগ দিতে হবে। বিয়োগ দিতে হবে। বিয়োগ দিয়ে সমান সমান আপনি বলতে পারবেন, সরকার সফল কি ব্যর্থ। যদি দেখেন, সফল তাহলে বিএনপি-আওয়ামী লীগের নাম থাকবে না। আর যদি দেখেন ব্যর্থ, তাহলে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ চলে আসবে।’
এখন বাস্তবতা চিন্তা করুন যে ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে নিয়ে, জামায়াতের আমিরকে নিয়ে, জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে, শিবিরকে নিয়ে, এনসিপিকে নিয়ে, এনসিপির নেতাদের নিয়ে সাধারণ আমজনতা যেসব কথাবার্তা বলছে, এটা আজ থেকে ছয় মাস আগে আমরা কল্পনাই করতে পারতাম না। গত এক মাস ধরে সেই এনসিপির নেতাদের সঙ্গে শিবিরের নেতাদের যে বাগবিতণ্ডা চলছে, এখানে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির যে বাগবিতণ্ডা চলছে, এটা আমরা এক মাস আগে কল্পনা করতে পারতাম না।
নেতাদের মধ্যে হতাশার কারণে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ভেঙে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামালের উপস্থাপনায় এক অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।
ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে অনেক আকাঙ্ক্ষা ছিল দেশে-বিদেশে। ঘোষণাপত্রের বড় অংশীজন কয়েকজন ছাত্রনেতা এটা নিয়ে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিলেন।
কিন্তু তারা রহস্যজনক কারণে ৫ আগস্টের ওই অনুষ্ঠানে অংশ না নিয়ে কক্সবাজার গেলেন। আমার কাছে মনে হয়, তারা কোনো হতাশাজনক সংবাদ আগেই পেয়েছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘এরপর ৫ জনকে এনসিপি শোকজ করেছে। যাদের মধ্যে রয়েছেন দলটির মূল ৪ জন নেতা, যারা দলের অর্ধেক।
তারা মূলত জুলাই ঘোষণাপত্রের অনুষ্ঠান বর্জন করে কক্সবাজার গেছেন।’
তিনি আরো বলেন, ঠিক তার আগের দিন এনসিপির আরেক নেত্রী সামান্তা শারমীন ড. ইউনূসের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘তিনি স্বার্থপর, নিজের স্বার্থটাই দেখেছেন।’
ড. মনজুর বলেন, ‘ড. ইউনূস নির্বাচনের সময় ঘোষণা করেছেন। তিনি আর বেশিদিন থাকবেন না।
তিনি ভর করেছেন বিএনপির ওপরে। অর্থাৎ, বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে তিনি সুন্দরভাবে দেশ ছেড়ে চলে যাবেন অথবা প্রেসিডেন্ট হবেন।’
তিনি বলেন, ‘ড. ইউনূস সফল একটি অভ্যুত্থানকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। এর ফলে এই তরুণরা এত ত্যাগের পর বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পড়ে গেছেন। তাদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।
এখন তারা হয়তো ভিসার জন্য চেষ্টা করছেন। হয়তো তারা অন্য কোনো দেশে চলে যেতে চাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এটা হলে পিটার হাস তাদের সহায়তা করতে পারেন। তবে আমি বলছি না তাদের সঙ্গে পিটার হাসের বৈঠক হয়েছে।’