সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু (Hasanul Haq Inu) এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)-র মধ্যে হওয়া একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়ে আলোড়ন তুলেছে। গত বছরের জুলাই মাসের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময়কার এই রেকর্ডে আন্দোলন দমনে আকাশ থেকে হেলিকপ্টারে গুলি চালানো ও ছত্রিসেনা নামানোর নির্দেশের কথা শোনা যায় হাসিনার কণ্ঠে।
রবিবার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের (Julkar Nain Sayer) নিজের ফেসবুক আইডিতে পাঁচ মিনিট ৩৪ সেকেন্ড দীর্ঘ এই অডিও প্রকাশ করলে দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। আন্তর্জাতিক এক সংস্থা অডিওটির সত্যতা যাচাই করেছে বলে জানিয়েছে। তারা নিশ্চিত করেছে, এটি সত্যিই শেখ হাসিনা ও ইনুর কথোপকথন। বর্তমানে হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন আর ইনু রয়েছেন কারাগারে।
ফোনালাপে ইনুকে বলতে শোনা যায়, “আপনার ডিসিশন খুবই কারেক্ট হইছে। সবাইকে অ্যারেস্ট করতে বললে আর মিছিল করার লোক থাকবে না।” উত্তরে শেখ হাসিনা জানান, যাত্রাবাড়ি ও শনির আখড়ায় মাদরাসার ছাত্ররা সেনাবাহিনীকে ঢুকতে দিচ্ছে না, তাই “আকাশ থেকে ছত্রিসেনা নামানো হচ্ছে, র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে বোম্বিংয়ের নির্দেশও দিয়েছি।” ইনু তখন পরামর্শ দেন, “হেলিকপ্টার থেকে সাউন্ড গ্রেনেড মারলে তারা আর টিকতে পারবে না। কারফিউ উঠে গেলেও যাতে নামতে না পারে, সেটার ব্যবস্থা করতে হবে।”
কথোপকথনের এক পর্যায়ে ইনু ইন্টারনেট চালুর অনুরোধ জানালে শেখ হাসিনা জানান, “ওরা ইন্টারনেট পুড়িয়ে দিয়েছে। আমি আর চালু করতে পারব না, অন্য সরকার এসে করলে তখন হবে।” তবে ইনুর জবাব ছিল সোজাসাপ্টা—“বাংলাদেশে আর অন্য সরকার আসবে না।” এসময় তিনি জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানালে হাসিনাও তাতে সম্মতি দেন।
এর আগে গত ২৫ জুলাই শেখ হাসিনা ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের কথোপকথনও ফাঁস হয়। সেখানে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আলাপ করেছিলেন তারা। আরও আগে বিবিসি প্রচার করেছিল শেখ হাসিনার একটি ফোনালাপ, যেখানে তাকে নিরাপত্তা বাহিনীকে সরাসরি প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের অনুমতি দিতে শোনা যায়।
বিবিসি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ইয়ারশট’-এর অডিও ফরেনসিক বিশ্লেষণে প্রমাণ মিলেছে, রেকর্ডগুলোতে কোনো ধরনের সম্পাদনা বা বিকৃতি নেই। ইলেকট্রনিক নেটওয়ার্ক ফ্রিকোয়েন্সি শনাক্ত হওয়ায় এটি আসল রেকর্ড বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অডিওতে হাসিনার কণ্ঠ, স্বরের ছন্দ ও শ্বাসের ধরণ সবই যাচাই করা হয়েছে।
ব্রিটিশ মানবাধিকার আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বিবিসিকে বলেন, “রেকর্ডিংগুলো শেখ হাসিনার ভূমিকা প্রমাণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এগুলো স্পষ্ট, নির্ভরযোগ্য এবং অন্যান্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত।” বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (ICT) পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন যেখানে শেখ হাসিনাসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা চলছে।