ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে আরও গভীর হচ্ছে বিভক্তি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) ইতোমধ্যেই একাধিক পদত্যাগ, বিচ্ছিন্নতা ও নতুন প্যানেলের জন্মের সাক্ষী হয়েছে।
ডাকসু নির্বাচনে বাগছাস নেতাদের ছত্রভঙ্গ অবস্থা এখন স্পষ্ট। একদিকে কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতা নতুন জোটে চলে গেছেন, আবার কেউ কেউ স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইতোমধ্যে তিনটি ভিন্ন প্যানেল থেকে বাগছাসের প্রাক্তন বা বর্তমান নেতাদের প্রার্থিতা দেখা যাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গঠন করেছেন ‘স্বতন্ত্র ঐক্যজোট’। অপরদিকে অভ্যুত্থান আন্দোলনের নেতা ও এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব মাহিন সরকার দাঁড়িয়েছেন ‘স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংসদ’-এর ব্যানারে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে। তবে এনসিপি তাকে নিবৃত্ত করতে না পেরে বহিষ্কার করেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় এবার সংগঠনের কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী স্বতন্ত্রভাবে সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিলেন।
বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে স্ত্রী নাফিসা ইসলাম সাকাফিকে সঙ্গে নিয়ে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। সাকাফি ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন আন্দোলন-অ্যাক্টিভিজমের পরিচিত মুখ। দীর্ঘদিন বাগছাসের প্যানেলে এজিএস প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি স্বতন্ত্র পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিলেন। বর্তমানে তাহমিদ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং এমফিল কোর্সে অধ্যয়নরত।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। বাগছাসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব সানজানা আফিফা অদিতি সরাসরি ঘোষণা দিয়েছেন— “একাই নির্বাচন করব।” তিনি এজিএস পদে লড়বেন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মুখ্য সংগঠক হাসিবুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। একই পদে ফরম তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব আবু সাঈদও।
অন্যদিকে, বাগছাসের যুগ্ম আহ্বায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল সংসদে ভিপি পদে প্রার্থী হয়েছেন মুক্তসেন মোক্তার। একইভাবে যুগ্ম সদস্যসচিব আজিজুল হক পদত্যাগের পর মাস্টারদা সূর্যসেন হলে ভিপি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আরও আছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক সাব্বির উদ্দিন রিওন, যিনি পদত্যাগ করে সদ্য বহিষ্কৃত মাহিন সরকারের প্যানেলে যোগ দিয়েছেন। যুগ্ম সদস্যসচিব সরদার নাদিম মাহমুদ শুভ-ও এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নাম লিখিয়েছেন।
সব মিলিয়ে ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে বাগছাস এখন এক অস্থির অধ্যায়ে দাঁড়িয়ে। একদিকে ভাঙন, অন্যদিকে জোটবদ্ধতার চেষ্টা—দুই প্রক্রিয়াই চলছে পাশাপাশি।