হাসপাতালে ভর্তি ১৬৭ জুলাই আহতের বেশির ভাগের মাথার খুলি ছিল না: চিকিৎসকের জবানবন্দি

জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের ভয়াবহ পরিস্থিতির নতুন তথ্য উঠে এসেছে আদালতে। রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া চিকিৎসক মো. মাহফুজুর রহমান (Md. Mahfuzur Rahman) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ বুধবার (২০ আগস্ট) তার জবানবন্দিতে জানান, ঐ সময় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১৬৭ গুরুতর আহতের মধ্যে বেশির ভাগের মাথার খুলি ছিল না।

মাহফুজুর রহমান ছিলেন মামলার ১৩তম সাক্ষী। এই মামলায় আসামি করা হয়েছে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina), সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান (Asaduzzaman Khan) এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন (Chowdhury Abdullah Al-Mamun)-কে। এদের মধ্যে সাবেক আইজিপি মামুন ইতিমধ্যেই মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেছেন এবং আদালতে হাজির হন।

চিকিৎসক জানান, “আমাদের হাসপাতালে মোট ৫৭৫ জন গুলি ও পিলেটবিদ্ধ রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে চলে যান। তবে অনেককেই ভর্তি করার মতো অবস্থা ছিল, কিন্তু সিট সংকটের কারণে এবং গুরুতর আহত রোগীর চাপ বেশি থাকায় তা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত ১৬৭ জনকে ভর্তি করা হয়, যাদের মধ্যে চারজন মৃত অবস্থায় আনা হয় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৯ জন মারা যান। সাতজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে পাঠানো হয়।”

তিনি আরও জানান, অন্তত ৩৩টি অস্ত্রোপচার তিনি নিজ হাতে সম্পন্ন করেছেন। অনেক আহতের শরীর থেকে গুলি ও পিলেট বের করেছেন। আহতরা নিজেরাই কখনো সেই পিলেট বা গুলি সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তারা জব্দ তালিকা অনুযায়ী দুটি পিলেট, একটি বড় বুলেট ও আরেকটি গোলাকার বুলেট উদ্ধার করেন।

জবানবন্দিতে উঠে আসে আরেকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। মাহফুজুর রহমান বলেন, ১৯ জুলাই রোগীর সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গেলে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা হাসপাতালে এসে তাকে চাপ দেন নতুন গুলিবিদ্ধ ছাত্রদের ভর্তি না করতে। তারা তাকে হুমকি দিয়ে বলেন, “অতি উৎসাহী হবেন না, এতে আপনার বিপদ হতে পারে।” একইসঙ্গে জানানো হয়, ইতিমধ্যে যারা ভর্তি হয়েছে তাদের ছাড়াও দেওয়া যাবে না—এ নিয়ে নাকি ওপর থেকে নির্দেশ এসেছে। ফলে তিনি ও তার সহকর্মীরা কৌশল হিসেবে ভর্তি রেজিস্ট্রারে গুলিবিদ্ধের স্থলে ‘সড়ক দুর্ঘটনা’ বা অন্যান্য কারণ উল্লেখ করে আহতদের ভর্তি করতে থাকেন।

অবশেষে সাক্ষ্যে মাহফুজুর রহমান স্পষ্ট অভিযোগ তোলেন যে, এই মানবতাবিরোধী অপরাধের মূল নির্দেশদাতা ছিলেন শেখ হাসিনা। তার নির্দেশ কার্যকর করেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ওবায়দুল কাদের, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরাফাতসহ আরও অনেকে। নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচার গুলি চালিয়ে যারা হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, তাদের বিচার এবং সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে ফাঁসি দাবি করেন তিনি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *