নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের আলোচিত ‘সুন্দরী নেত্রী’রা এখন যা কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজ (Eden College)—দেশের এসব খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক সময় রাজত্ব করতেন যেসব ছাত্রলীগ (Chhatra League) নেত্রীরা, সেই ‘অপরাজেয় সুন্দরী’ নামে পরিচিত নেত্রীদের এখন খোঁজই মিলছে না। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর তারা কার্যত অন্তর্হিত। অথচ কিছুদিন আগেও ক্যাম্পাস রাজনীতিতে ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

জানা গেছে, যারা একসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর দমন-পীড়নে নেতৃত্ব দিতেন, তারা এখন ডিজিটাল দুনিয়ায় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে সাইবার প্রোপাগাণ্ডা চালানোতেই নাকি ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন এ সাবেক নেত্রীরা।

কে কোথায়?

পুলিশ ও বিভিন্ন থানা সূত্রে জানা গেছে, আলোচিত এসব নেত্রীদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজনই গ্রেপ্তার হয়েছেন। গত বছরের ২৭ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খাদিজা আক্তার ঊর্মি। একইদিন রাজশাহী মহিলা কলেজের জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক আলফি শাহরিন আরিয়ানা আটক হন। এরপর ১৬ ডিসেম্বর আটক হন বহুল আলোচিত ইডেন কলেজের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা।

তবে ক্যাম্পাসের ‘সন্ত্রাসী সুন্দরীদের’ তালিকায় থাকা তিলোত্তমা সিকদার, আতিকা বিনতে হোসেন, রাজিয়া সুলতানা, নুজহাত ফারিয়া রোকসানাদের কোনো হদিস এখন পর্যন্ত মেলেনি।

‘সুন্দরী’ থেকে সাইবার যোদ্ধা

এই নেত্রীরা একসময় ক্যাম্পাসে সিট বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জন্য সমালোচিত ছিলেন। এমনকি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর গরম পানি নিক্ষেপের মতো ঘটনা নিয়েও তাদের নাম এসেছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার পতনের পরপরই যেন বাতাসে মিলিয়ে গেছেন তারা।

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ ঘোষণার পর, অন্তর্বর্তী সরকারের আগমনের প্রেক্ষিতে, এই নেত্রীরা আবারও সক্রিয় হয়েছেন, তবে ভিন্ন আকারে—সাইবার যোদ্ধা হিসেবে। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ (Awami League) বিগত কয়েক বছরে প্রায় এক লাখ “সাইবার যোদ্ধা” গড়ে তোলে, যাদের মধ্যে প্রায় ৪৫ হাজারকে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এসব প্রশিক্ষণের পেছনে ছিলেন সজীব ওয়াজেদ জয় (Sajeeb Wazed Joy), যার তত্ত্বাবধানে এবং দলীয় গবেষণা সংস্থা সিআরআই (CRI)-এর সহায়তায় এসব কার্যক্রম চলেছে।

মেটার রিপোর্টে ধরা পড়েছে ‘ডিজিটাল যুদ্ধ’

সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশ-সংশ্লিষ্ট ১৪৮টি ভুয়া অ্যাকাউন্ট ও পেজ বন্ধ করা হয়েছে, যেগুলো থেকে বিএনপি, তারেক রহমান (Tarique Rahman), এবং অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছিল। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগ পক্ষে চালানো হচ্ছিল প্রোপাগাণ্ডা।

এএফপির (AFP) ফ্যাক্ট চেকার কদরুদ্দিন শিশির জানিয়েছেন, ৯৮টির মতো পেজ ও অ্যাকাউন্ট সরিয়ে ফেলা হলেও পরবর্তীতে আরও পেজ খোলা হয়েছে। এসব থেকে এখনও অর্থ ব্যয় করে বুস্ট করে বিভ্রান্তিকর পোস্ট চালানো হচ্ছে।

কোথায় আছেন সেই নেত্রীরা?

প্রশ্ন এখন—আত্মগোপনে থাকা সেই ‘অপরাজেয়’ নেত্রীরা ঠিক কোথায় আছেন? তারা কি এখনো দেশের ভেতরে, নাকি সীমান্ত পেরিয়ে অন্য কোথাও আশ্রয় নিয়েছেন? যদিও বাস্তবে তাদের অবস্থান জানা যাচ্ছে না, তবে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় তাদের উপস্থিতি দিনের পর দিন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ‘ক্যাম্পাস কুইন’ থেকে এখন তারা হয়ে উঠেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে অনলাইনে লড়াই চালানো ‘ডিজিটাল গেরিলা’।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *