রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে চাঞ্চল্যকর এক ঘটনায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার জুমার নামাজের পর ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির পূর্বঘোষিত কর্মসূচি থেকে বের হওয়া একদল লোক নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবার শরিফে হামলা চালায়। হামলার সময় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং কবর থেকে মরদেহ উত্তোলনের পর মহাসড়কের পাশে নিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অন্তত অর্ধশত মানুষ আহত হন। পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামলেও এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নিজের বাড়িতেই দরবার শরিফ স্থাপন করেছিলেন নুরুল হক। গত ২৩ আগস্ট বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় তাঁর মৃত্যু হলে বিশেষ কায়দায় মাটি থেকে কয়েক ফুট উঁচুতে লাশ দাফন করা হয়। এই কবর দেওয়ার প্রক্রিয়াকে শরিয়তবিরোধী বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় আলেম সমাজ। তাঁরা কবর সমতল করার দাবি জানান।
ঘটনার সূত্রপাত হয় গত মঙ্গলবার, যখন উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি সংবাদ সম্মেলন করে নুরুল হকের দরবারে ‘অনৈতিক কার্যকলাপের’ অভিযোগ তুলে আলটিমেটাম দেয়। তারা ঘোষণা করে, বৃহস্পতিবারের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে শুক্রবার জুমার পর বিক্ষোভ সমাবেশ ও “মার্চ ফর গোয়ালন্দ” কর্মসূচি পালন করবে।
আজ বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে একদল লোক লাঠিসোঁটা, শাবল ও হাতুড়ি নিয়ে নুরুল হকের বাড়ির দিকে অগ্রসর হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় আলেমরা তাদের নিবৃত্ত করতে চাইলেও পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মিছিলকারীরা পুলিশের দুটি গাড়ি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িও ভাঙচুর করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নুরুল হকের দরবারে প্রবেশের চেষ্টা করলে ভেতরে থাকা ভক্তরা ইটপাটকেল ছুঁড়ে প্রতিরোধ করে। পাল্টা দিক থেকেও ইটপাটকেল ছোড়া হয়। কিছুক্ষণ পর কয়েক শ মানুষ দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালায় এবং ভক্তদের পেটায়। এরপর কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন পদ্মার মোড়ে নিয়ে গিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা কৌশিক কুমার দাস জানান, আহতদের শরীরে ইটপাটকেল, লাঠি ও ধারালো অস্ত্রের কোপের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার কামরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। হতাহতের সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। দরবার এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এদিকে এই ঘটনাকে ‘অমানবিক ও ঘৃণ্য’ আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, “এই অমানবিক ও ঘৃণ্য কাজটি আমাদের মূল্যবোধ, আইন এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজের মৌলিক ভিত্তির ওপর সরাসরি আঘাত।”
সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এ ধরনের বর্বরতা কোনো অবস্থাতেই সহ্য করা হবে না। যারা এই অপরাধে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করা হবে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী জবাবদিহির ঊর্ধ্বে নয়। দ্রুত ও কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
দেশের নাগরিকদের উদ্দেশে অন্তর্বর্তী সরকার ঘৃণা ও সহিংসতা প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানিয়ে বলেছে, “সহিংসতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন, ন্যায়বিচার ও মানবতার আদর্শকে সমুন্নত রাখতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা গড়ে তুলুন।”