জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ (Anisul Islam Mahmud) বলেছেন, তাদের দলও নির্বাচনে যেতে চায়, তবে তার আগে দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। তিনি সতর্ক করে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দেশের সংকট আরও গভীর হবে।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের নেতাদের নিয়ে আয়োজিত যৌথ সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ কথা জানান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলার অবনতি, অর্থনৈতিক দুরবস্থা, লোডশেডিং, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মামলা বাণিজ্য ও মব সন্ত্রাস চলছে। এই পরিস্থিতিতে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কতটা সম্ভব—সে প্রশ্ন সরকারকে ভাবতে হবে।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ অভিযোগ করে বলেন, দেশে এখনো মিথ্যা মামলার মাধ্যমে মামলা বাণিজ্য চলছে। নতুন আইন করার পরও তার কার্যকারিতা দেখা যাচ্ছে না। সরকার বলেছিল, দ্রুত তদন্ত শেষে অন্তর্বর্তী রিপোর্ট দিয়ে নিরপরাধ ব্যক্তিদের রেহাই দেওয়া হবে, কিন্তু বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। তিনি প্রশ্ন তুলেন, “যারা নির্বাচনে অংশ নেবে তাদের নামে যদি মিথ্যা মামলা হয়, তবে তারা কিভাবে এলাকায় গিয়ে প্রচারণা চালাবে?”
জাতীয় পার্টির দলীয় প্রতীক লাঙ্গল নিজেদের দখলে থাকবে বলে দাবি করে আনিসুল ইসলাম বলেন, যথাযথ নিয়ম ও আইনি প্রক্রিয়া মেনে তাদের কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে, তাই লাঙ্গল প্রতীক তাদের কাছেই থাকবে।
ডাকসু নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিজয় প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, “এই নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিতে হবে। বড় দলের কর্মী থাকলেও যদি জনসমর্থন না থাকে, নির্বাচনে ফলাফল ভিন্ন হতে পারে—ডাকসু নির্বাচন তা প্রমাণ করেছে।”
সভায় উপস্থিত জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার (ABM Ruhul Amin Hawlader) একইভাবে ডাকসুতে বিজয়ী ইসলামী ছাত্রশিবিরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “ডাকসুতে মানুষের ভালোবাসারই বিজয় হয়েছে। ছাত্ররা পরিবর্তন ও বিবর্তনের পক্ষে রায় দিয়েছে। আমরা সেই রায়কে সম্মান করি।”
তিনি আরও বলেন, ডাকসু নির্বাচন এবং গত বছরের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান বা জুলাই বিপ্লব আমাদের শিক্ষা দিয়েছে—অহংকার ও দম্ভ করলে পতন অনিবার্য। তার মতে, জাতীয় পার্টির প্রতীক লাঙ্গল নিরাপদ আছে আনিসুল ইসলামের নেতৃত্বে। জি এম কাদের এরশাদের ভাই সূত্রে চেয়ারম্যান হলেও জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে পারেননি, এমনকি কারাগারে একদিনও যাননি বা বড় মিছিল করতে পারেননি। তাই বৈধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হওয়া সম্মেলনের পর দলীয় প্রতীক লাঙ্গল এখন আনিসুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন অংশের কাছেই থাকবে।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির নির্বাহী চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. মুজিবুল হক চুন্নু, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এডভোকেট কাজী ফিরোজ রশিদসহ অন্যান্য নেতারা।