নেপালে আসন্ন ৫ মার্চ পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি রাম চন্দ্র পৌডেল (Ram Chandra Paudel)। শুক্রবার অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি (Sushila Karki) শপথ নেওয়ার পরপরই রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে এক বার্তায় এই ঘোষণা জানানো হয়।
রাষ্ট্রপতির দপ্তর জানায়, কার্কির সুপারিশের ভিত্তিতেই প্রতিনিধি পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন রাষ্ট্রপতি পৌডেল। স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাষ্ট্রপতি ভবনে কার্কিকে শপথ বাক্য পাঠ করান তিনি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে উল্লেখ করা হয়, শপথের পরপরই কার্কির প্রথম সিদ্ধান্ত ছিল প্রতিনিধি পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ। এর মধ্য দিয়ে নেপাল ইতিহাসের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পেলো—একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি, যিনি ইতিপূর্বে দেশের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি হিসেবেও নজির গড়েছিলেন।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতি পৌডেল, জেন-জি আন্দোলনকারীরা এবং সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেল (Ashok Raj Sigdel)-এর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে কার্কিকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী করার সিদ্ধান্তে ঐকমত্য গড়ে ওঠে।
গত তিন দিন ধরে টানা বিক্ষোভে উত্তাল ছিল নেপাল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে চলা আন্দোলনের চাপেই পতন ঘটে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির সরকারের।
৭২ বছর বয়সী কার্কির সঙ্গে এই তরুণ প্রজন্মের সংযোগ বেশ দৃঢ়। সততা, ন্যায়বিচার, নিরপেক্ষতা এবং দুর্নীতিবিরোধী কঠোর অবস্থানের কারণে তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। বিচারপতি থাকাকালে একাধিক ক্ষমতাসীন মন্ত্রীকে জেলে পাঠানো থেকে শুরু করে সরাসরি সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতেও পিছপা হননি তিনি।
তবে তার বিচারপতির জীবন একেবারেই ঝঞ্ঝাটমুক্ত ছিল না। দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র এক বছরের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু হয়। তীব্র জনমতের কারণে শেষ পর্যন্ত সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, যদিও ঘটনার অভিঘাতে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন।
এখন আরও বড় দায়িত্ব তার কাঁধে। ওলি সরকারের পতনের পর অস্থির নেপালে নির্বাচনের আয়োজনের মতো কঠিন ও জটিল কাজের ভার এখন পড়েছে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী কার্কির ওপর। এই চ্যালেঞ্জ সামাল দিতে তার দক্ষতা ও দৃঢ়তাই হবে নেপালের ভবিষ্যৎ রাজনীতির নির্ধারক উপাদান।