জামায়াত নেতা হোসাইনের বিরুদ্ধে মাদরাসাছাত্রীকে যৌ’-ন হয়রানির অভিযোগ

নওগাঁয় একের পর এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে এনায়েতপুর দাখিল মাদরাসা-এর শিক্ষক ও সদর উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মোনায়েম হোসাইন-এর বিরুদ্ধে। অভিযোগ করেছেন মাদরাসার বেশ কয়েকজন ছাত্রী, যাদের দাবি—শ্রেণিকক্ষে একা পেলে তিনি শ্লীলতাহানি করেছেন এবং জোরপূর্বক চুম্বন করেছেন। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিক্ষোভ করেন এবং তার ছবি ও পোস্টারে জুতার মালা পরিয়ে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানান।

ভুক্তভোগী এক ছাত্রী অভিযোগ করেছেন, ১৫ সেপ্টেম্বর বৃষ্টির দুপুরে ক্লাস চলাকালে তিনি একা ছিলেন। সেই সুযোগে মোনায়েম হোসাইন তার হিজাব খুলতে বলেন এবং অশোভনভাবে শরীর স্পর্শ করেন। অন্য এক সময় তাকে জোর করে চুম্বনও করেন। তিনি এই ঘটনা সহপাঠীদের জানালে আরও কয়েকজন একই অভিজ্ঞতার কথা শোনান। এর পরপরই শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদে নামেন।

দশম শ্রেণির এক ছাত্রী জানান, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বহু ছাত্রী মোনায়েম হোসাইনের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। কিন্তু ভয় ও সামাজিক চাপে এতদিন কেউ মুখ খোলেননি। মাদরাসা সুপারকে অভিযোগ করলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। আরেকজন ছাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাদরাসায় পর্দার কারণে তারা ভর্তি হয়েছিলেন। অথচ শিক্ষক তাদের হিজাব খোলার নির্দেশ দেন এবং নানা অজুহাতে শরীর স্পর্শ করেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, তিনি যাতে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে না পারেন এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পান।

২২ সেপ্টেম্বর অভিযোগের মুখে মোনায়েম হোসাইনকে শিক্ষার্থীদের সামনে দাঁড় করান মাদরাসার আরেক শিক্ষক সালেক রহমান। এ সময় শিক্ষার্থীদের অভিযোগের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি অভিযুক্ত শিক্ষক। ১৩ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের ভিডিও প্রমাণ এখন প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। এমনকি সেই দিন রাতেই সালেক রহমানের মোবাইলে কল করে নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান মোনায়েম হোসাইন। ফোনালাপের সেই রেকর্ডও সংরক্ষিত আছে।

সালেক রহমান অভিযোগ করেন, সদর উপজেলা জামায়াতের আমির এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী হওয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব খাটান মোনায়েম হোসাইন। এজন্যই মাদরাসা সুপার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সাহস পাচ্ছেন না। তিনি দাবি করেন, এবতেদায়ি শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও নিয়ম ভেঙে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রীদের ক্লাস নিতেন মোনায়েম। এক ছাত্রীকে জোরপূর্বক চুম্বন করার অডিও রেকর্ডসহ বেশকিছু প্রমাণ ছাত্রীদের কাছে সংরক্ষিত আছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোনায়েম হোসাইন দাবি করেন, তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জামায়াত প্রার্থী হওয়ায় তার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্যই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তিনি অভিযোগগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। অপরদিকে শিক্ষক নাজমুল হক বলেন, মোনায়েম হোসাইন একজন সম্মানিত মানুষ, এর আগে কখনো তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেনি। একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে বিষয়টি অন্য খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

এ ঘটনায় নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইবনুল আবেদীন বলেন, ভুক্তভোগীরা মৌখিক অভিযোগ করেছেন। তাদের লিখিত অভিযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্যদিকে নওগাঁ জেলা জামায়াতের আমির খ. মো. আ. রাকিব জানান, সদর উপজেলা জামায়াতের আমিরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ যাচাইয়ে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন দ্রুত জমা দেওয়া হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংগঠনগতভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার ভাষায়, “জামায়াতে দুশ্চরিত্র কারোর জায়গা নেই।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *