আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই রহস্যের আড়ালে ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার ও আলোচিত-সমালোচিত কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ (Harun Or Rashid)। দীর্ঘ নীরবতার পর অবশেষে তার খোঁজ মিলেছে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের উডল্যান্ড শহরে।
সূত্র জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) দেশ ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই ঢাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শাহবাগে বাড়তে থাকে মানুষের ভিড়। ওই দিন সকাল থেকে হারুন ছিলেন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তবে হাসিনার দেশত্যাগের খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকে তিনি হঠাৎই ওয়্যারলেসে কোনো নির্দেশনা দেওয়া বন্ধ করে দেন। দুপুর নাগাদ পুলিশ সদর দফতরের পাশে সিটি করপোরেশনের দেয়াল টপকে পালিয়ে যান তিনি।
এরপর তিনি কোথায় গিয়েছিলেন—সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য মেলেনি। তবে পুলিশের একাধিক সূত্রের দাবি, তিনি রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকায় এক দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিরাপদে দেশ ছাড়ার নিশ্চয়তা চান। কিন্তু কূটনৈতিক মহলের তথ্যমতে, সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়া হয়। ফলে আবারও তিনি লুকিয়ে থাকতে বাধ্য হন।
সেদিন বিকালে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সোয়াটের একটি গাড়িতে করে তাকে মিরপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে নতুন পরিকল্পনায় বিমানবন্দর দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন হারুন। গাড়ি নিয়ে বিমানবন্দর পর্যন্ত পৌঁছলেও টার্মিনালে প্রবেশের আগেই সাধারণ মানুষ তাকে চিনে ফেললে বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে মারধরের শিকার হন তিনি। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে রাজধানীর একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পর থেকেই তার কোনো সন্ধান মিলছিল না।
অবশেষে, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক দিলশানা পারুল (Dilshana Parul) সম্প্রতি তার ফেসবুক আইডিতে একটি ছবি পোস্ট করে দাবি করেন, টেক্সাসের উডল্যান্ড শহরে দেখা গেছে ডিবি হারুনকে। ছবিসহ পোস্টে তিনি আমেরিকায় প্রবাসীদের উদ্দেশে আহ্বান জানান, “সজাগ থাকুন, দেখলেই দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করুন।” মুহূর্তেই পোস্টটি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
এ ঘটনায় দেশজুড়ে নতুন করে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদী (Sharif Osman Hadi) তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ছবিটি শেয়ার করে প্রশ্ন তোলেন, “ঢাকায় ধরা পড়া ডিবি হারুনকে আমেরিকায় পাঠালো কারা?”
এদিকে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব এস এম সাইফ মোস্তাফিজও একই ছবি শেয়ার করে ফেসবুকে পোস্ট দেন। সেখানে তিনি আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল (Asif Nazrul)-কে ম্যানশন করে প্রশ্ন তোলেন, “দেশে ধরা পড়ার পরও কীভাবে হারুন নিরাপদে টেক্সাসে চলে গেলেন? আপনারা উপদেষ্টা হয়ে কী কাজ করছেন?”
তার ক্ষোভ আরও প্রকাশ পায় পোস্টের ভাষায়। তিনি লেখেন, আওয়ামী লীগকে ঘিরে কী করলেন আপনারা? একটি মহাধুমধামে নির্বাচন আয়োজন করে ক্ষমতা হস্তান্তর, আবার সেই আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নিরাপত্তা দেওয়া—এই কাজগুলো ছাড়া আর কী করছেন আপনারা?
ডিবি হারুনের যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া থামছেই না। একসময় ঢাকায় আলোচিত এই পুলিশ কর্মকর্তাকে ঘিরে নতুন করে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে।