ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দায়িত্বশীল চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে রোগী ভর্তি নিচ্ছেন এক সিকিউরিটি গার্ড—এমন চিত্র ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল কর্মকর্তার কক্ষে ঘটে এই ঘটনা। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জানা যায়, নির্ধারিত চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকায় তার চেয়ারে বসে রোগীর নাম-ঠিকানা লিখে ভর্তি নিচ্ছিলেন সিকিউরিটি গার্ড তামিম হোসেন। এ সময় ঘটনাটি মুঠোফোনে ধারণ করেন ময়মনসিংহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক জেলা সদস্যসচিব আলী হোসেন (Ali Hossain)। তবে বিষয়টি টের পেয়ে কয়েকজন গার্ডের সঙ্গে মিলে তিনি যে ভিডিও ধারণ করেছেন তা মুছে ফেলার চেষ্টা চলে। শেষ পর্যন্ত নিজের পরিচয় দেওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আলী হোসেন ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করার পাশাপাশি সাংবাদিকদেরও সরবরাহ করেন।
এ বিষয়ে আলী হোসেন বলেন, “অসুস্থতার কারণে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে যাই। গিয়ে দেখি চিকিৎসক নেই, কিন্তু সিকিউরিটি গার্ড রোগী ভর্তি নিচ্ছেন এবং স্বজনদের পরামর্শ দিচ্ছেন। বিষয়টি আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়েছে, তাই ভিডিও করি। অথচ পরে আমাকে বাধা দেওয়া হয়।”
নিজেকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সিকিউরিটি গার্ড তামিম হোসেন জানান, “ঘটনার সময় জরুরি বিভাগের চিকিৎসক পাশের রুমে ছিলেন। আমার এক বন্ধু রোগী নিয়ে আসেন, তাকে সহযোগিতা করার জন্য ভর্তি টিকিটে নাম-ঠিকানা লিখে দিয়েছি। আমি শুধু সাহায্য করেছি।”
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) চিকিৎসক মো. মাইনউদ্দিন খান (Dr. Md. Mainuddin Khan) বিষয়টিকে “দুঃখজনক” আখ্যা দেন। তিনি বলেন, “একজন সিকিউরিটি গার্ড কোনোভাবেই রোগী ভর্তি নিতে পারেন না। ওই সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক অজু করতে গিয়েছিলেন। সেই ফাঁকে গার্ড ভর্তি টিকিট পূরণ করেছেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং বিষয়টি তদন্তাধীন।”
অন্যদিকে সমাজ রূপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ (Imtiaz Ahmed) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “প্রায় ছয় জেলার মানুষ চিকিৎসার জন্য ভরসা করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন। অথচ এখানে নানান ধরনের অব্যবস্থাপনা চলছে—হাসপাতালের ভেতরে কুকুরের অবাধ বিচরণ থেকে শুরু করে সিকিউরিটি গার্ডের চিকিৎসকের চেয়ারে বসে রোগী ভর্তি নেওয়া পর্যন্ত। এসব অনিয়ম বন্ধ না হলে মানুষের আস্থা হারিয়ে যাবে।”
ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, দেশের অন্যতম বৃহৎ হাসপাতাল যদি সিকিউরিটি গার্ডের হাতে চলে যায়, তবে সাধারণ মানুষ প্রকৃত চিকিৎসা সেবা পাবে কোথায়?