আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের দীর্ঘ শাসনামলে বিরোধী দল ও মতের মানুষদের গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের হওয়া দুটি মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে আমলে নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (International Crimes Tribunal)। এই মামলাগুলোয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)-কে প্রধান আসামি করে মোট ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
বুধবার ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল মামলার অভিযোগ আমলে নেন এবং আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। অভিযোগে বলা হয়, আওয়ামী লীগের শাসনামলে র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেল এবং জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টার (জেআইসি)-এ বহু বিরোধী রাজনীতিক ও সাধারণ নাগরিককে আটক রেখে নির্যাতন, গুম ও হত্যা করা হয়েছে, যা মানবতাবিরোধী অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।
এই মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন শেখ হাসিনার সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকী এবং সাবেক পাঁচ ডিজিএফআই মহাপরিচালক—লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী ও মেজর জেনারেল হামিদুল হক।
এছাড়াও অভিযুক্তদের তালিকায় আছেন মেজর জেনারেল মোহাম্মদ তৌহিদুল উল ইসলাম (অব.), মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, কর্নেল কে এম আজাদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুব আলম, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ খায়রুল ইসলাম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মখছুরুল হক (অব.)।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-এর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, সংশোধিত আইন অনুযায়ী এই মামলার আসামিরা কেউই সরকারি বা সামরিক পদে থাকতে পারবেন না। তিনি আরও বলেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধে সম্পৃক্তদের বিচার থেকে কেউই রেহাই পাবে না।”
প্রসঙ্গত, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনামলে বহু মানুষ গুমের শিকার হন। এর মধ্যে শতাধিক ব্যক্তির আজও কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি, অনেকের লাশও গুম করে ফেলা হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র গণআন্দোলনের মুখে তথাকথিত ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর গোপন বন্দিশালা থেকে মুক্তি পান গুমের শিকার কয়েকজন ব্যক্তি—তাদের মধ্যে ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাশেম ও আবদুল্লাহিল আমান আযমী অন্যতম।
ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতেই এসব গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। সেই মামলার ধারাবাহিকতায় আজ সকালে প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে, যা আদালত আমলে নেয়।