‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়ন ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন তীব্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে সম্ভাব্য গণভোট। তবে এই গণভোট কবে অনুষ্ঠিত হবে—এই নিয়েই চলছে প্রধান বিতর্ক। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাসুদ কামাল তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ প্রসঙ্গে একটি মন্তব্য পোস্ট করলে, তা দ্রুতই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে আলোচনার জন্ম দেয়।
তার স্ট্যাটাসে মাসুদ কামাল লেখেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে গণভোটের প্রস্তাব উঠেছে। সবাই রাজি গণভোটে। বিরোধ এখন—গণভোট কবে হবে সেটা নিয়ে।” তিনি জানান, বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল চায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হোক। অপরদিকে জামায়াত, এনসিপি এবং কিছু ছোট রাজনৈতিক দল চাইছে নভেম্বর বা ডিসেম্বর মাসে এই গণভোট আয়োজন করা হোক।
তবে মাসুদ কামালের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, আলোচনার ভেতরে একটি বিষয় স্পষ্ট—সব পক্ষই ধরে নিয়েছে গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়ী হবে, অর্থাৎ জনগণ জুলাই সনদের পক্ষে রায় দেবে। কিন্তু তিনি প্রশ্ন তোলেন, “আসলেই কি তাই?” তার মতে, এই আশাবাদ হয়তো অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের পরিচায়ক হতে পারে।
তার বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, বিএনপি শুরুতে গণভোটে তেমন আগ্রহ দেখায়নি। দলের প্রস্তাব ছিল—নির্বাচনের পর জাতীয় সংসদের মাধ্যমে জুলাই সনদের সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করা হোক। কিন্তু জামায়াত ও এনসিপি এই প্রস্তাবে পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারেনি। এখানেই জন্ম নিয়েছে নতুন রাজনৈতিক জটিলতা।
মাসুদ কামাল আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ভোটের সময় বিএনপির ভোটাররা সেই অবিশ্বাস ভুলবে না—বরং এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। তার সঙ্গে যদি আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যবাহী ভোটাররা যুক্ত হয়, তাহলে ‘না’ ভোটের পক্ষে জনসমর্থনও অস্বীকার করা যাবে না। তার ভাষায়, “সবমিলিয়ে গণভোটে যদি ‘না’ জিতে যায়, তাহলে? তাহলে তো পুরো সংস্কার কার্যক্রমই ভেস্তে যাবে!”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জুলাই সনদ এখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম বিতর্কিত নীতিগত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। এই সনদের অধীনে প্রস্তাব করা হয়েছে সংবিধান সংশোধন, নির্বাচন কমিশনের কাঠামো পরিবর্তন, প্রশাসনে বিকেন্দ্রীকরণ এবং শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন নীতি প্রণয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার উদ্যোগ।
তবে অন্তর্বর্তী সরকার সূত্র জানায়, এসব সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য জনগণের গণসমর্থন অপরিহার্য। সেই কারণেই গণভোটের প্রস্তাব সামনে এসেছে। কিন্তু তারিখ, প্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে দলগুলোর বিভক্তির কারণে বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত হয়ে আছে, যা দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে এক নতুন অনিশ্চয়তার দোরগোড়ায় এনে দাঁড় করিয়েছে।