আয়নাঘর থেকে মুক্তি পাওয়া মাইকেল চাকমার ৮ বছরের কারাদণ্ড

পার্বত্য চট্টগ্রামভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (United Peoples Democratic Front – ইউপিডিএফ)-এর সংগঠক মাইকেল চাকমা ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল ঢাকার শ্যামলি এলাকা থেকে সাদা পোশাকের ব্যক্তিদের দ্বারা তুলে নেওয়ার পর দীর্ঘদিন নিখোঁজ ছিলেন। পরে জানা যায়, তাকে গোপনে এমন এক বন্দীশালায় আটকে রাখা হয়েছিল, যা অনেকের কাছে ‘আয়নাঘর’ নামে কুখ্যাত। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর তিনি অবশেষে মুক্তি পান। কিন্তু মুক্তির কিছুদিন পরই ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়—একটি পুরনো চাঁদাবাজির মামলায় তার বিরুদ্ধে আদালত আট বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছেন।

সম্প্রতি রাঙামাটির অতিরিক্ত দায়রা জজ তাওহিদুল হক এই রায় দেন। একই মামলায় সুমন চাকমা নামের আরেক ব্যক্তিকেও সমান মেয়াদের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবর নিরাপত্তা বাহিনী মাইকেল চাকমা ও সুমন চাকমাকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও টাকাও জব্দ করা হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। পরে দুজনকেই লংগদু থানায় হস্তান্তর করা হয় এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়।

রাঙামাটি অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী প্রসাদেব চাকমা রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।

এদিকে, আদালতের এই রায় নিয়ে ইউপিডিএফের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। সংগঠনের প্রচার বিভাগের দায়িত্বে থাকা নিরন চাকমা ফেসবুকে এক পোস্টে লেখেন, “মাইকেল চাকমা পাঁচ বছরের বেশি সময় গুম অবস্থায় নির্যাতন সহ্য করেছেন। এখন এসে এই ধরনের রায়—এটি কতটা ন্যায্য?” তার এই প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা সৃষ্টি করেছে।

আয়নাঘরের অন্ধকার থেকে ফিরে আসা মাইকেল চাকমার জীবনের নতুন এই অধ্যায় যেন আরও একবার রাষ্ট্র ও পাহাড়ের সম্পর্কের টানাপোড়েনকে সামনে নিয়ে এসেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *