‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও গণভোটের সময় নিয়ে এখনো মতবিরোধ থাকলেও, সনদে স্বাক্ষরের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সংশ্লিষ্ট সব রাজনৈতিক দল। বিএনপি (BNP), জামায়াতে ইসলামি (Jamaat-e-Islami), জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর নেতৃত্বে থাকা চরমোনাই পীরের দলসহ সংশ্লিষ্ট সব রাজনৈতিক দল দু’জন করে প্রতিনিধির নাম ঐকমত্য কমিশনের কাছে পাঠিয়েছে।
গতকাল শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ও ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস-এর সভাপতিত্বে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়— ‘জনসাধারণের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে’ জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। তবে বৈঠক শেষে জানা গেছে, ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা আজ রবিবার রাতে ইতালির রোম যাচ্ছেন এবং আগামী বুধবার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, বৈঠক শেষে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হতে যাচ্ছে। এই অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে গতকাল বিকাল পাঁচটার মধ্যে দু’জন প্রতিনিধির নাম পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ইসলামী আন্দোলনসহ তিনটি ইসলামী রাজনৈতিক দলসহ সব দলই শেষ পর্যন্ত সময়মতো প্রতিনিধিদের নাম পাঠিয়েছে।
গত ১১ সেপ্টেম্বর পরিবর্তন ও সংশোধন শেষে ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’-এর চূড়ান্ত ভাষ্য ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে পাঠিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। সনদে সই করার জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর বিকাল পাঁচটার মধ্যে প্রতিটি দলকে দু’জন প্রতিনিধির নাম পাঠাতে বলা হয়। সে সময় বিএনপিসহ ১৫টি দল ইতোমধ্যেই তাদের প্রতিনিধি চূড়ান্ত করে কমিশনের কাছে জমা দিয়েছিল। বিএনপির পক্ষ থেকে মনোনীত হন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
জামায়াতের পক্ষ থেকে নাম পাঠানো হয়েছে দলের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের। তাহের এতদিন জামায়াতের পক্ষে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। এনসিপির পক্ষে মনোনীত হয়েছেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য-সচিব আখতার হোসেন। নাগরিক ঐক্যের পক্ষ থেকে সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষ থেকে প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান রুবেল, আর এবি (আমার বাংলাদেশ) পার্টির পক্ষে চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও জেনারেল সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান ফুয়াদের নাম পাঠানো হয়েছে।
ঐকমত্য কমিশন গত বৃহস্পতিবারের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত বিশ্লেষণ করে খুব শিগগিরই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় ও চূড়ান্ত সনদ সরকারের কাছে জমা দেবে। পাশাপাশি, এই সুপারিশ ও চূড়ান্ত কপিগুলো দলগুলোকেও পাঠানো হবে। তবে এখন পর্যন্ত সরকার বা কোনো দলের কাছে তা পাঠানো হয়নি।
কমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, গণভোটের সময়সূচি ও প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্যের কারণে কমিশন এ বিষয়ে কৌশলী হতে পারে। সংসদের উচ্চ সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন করা হবে কি না, সেই প্রশ্নেও কমিশন সতর্ক অবস্থান নিচ্ছে। জুলাই সনদে এসব বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা নাও থাকতে পারে। বরং সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।