শুক্রবার সই না করলেও পরবর্তীতে জুলাই সনদে যুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকবে: অধ্যাপক আলী রীয়াজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, কোনো রাজনৈতিক দল যদি আগামীকাল শুক্রবার ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এ স্বাক্ষর না করে, তবে তারা পরবর্তীতেও এতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।

আগামীকাল শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। সেখানে উপস্থিত থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস

সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক জানতে চান, কোনো দল যদি কাল সই না করে, তারা পরে কি যুক্ত হতে পারবে? জবাবে অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, “আগামীকালই যদি সবাই সই করে, তা ভালো হয়। তবে কেউ পরে যোগ দিতে চাইলে, তারা তো সনদ প্রক্রিয়ার অংশীদার। শরিক হিসেবে তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে। কমিশন আশা করছে, সবাই একসঙ্গে উৎসবমুখর পরিবেশে স্বাক্ষর করবে।”

‘আইনি ভিত্তি ছাড়া এবং আদেশের নিশ্চয়তা ছাড়া’ জুলাই সনদে সই না করার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আলী রীয়াজ বলেন, এনসিপির অবস্থান কমিশন গভীরভাবে পর্যালোচনা করেছে। তিনি বলেন, “এনসিপির নেতারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অগ্রগামী সৈনিক ছিলেন। তারা নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সনদ প্রক্রিয়ায়ও অংশ নিয়েছেন। তাদের অবদান সনদ প্রণয়নে একাধিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।”

আলী রীয়াজ আরও বলেন, কমিশন নিজেও মনে করে, জুলাই সনদকে একটি আইনি ভিত্তি দেওয়া প্রয়োজন। কমিশনের মেয়াদকালেই তারা এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ জমা দেবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এনসিপিসহ সব রাজনৈতিক দল সনদে স্বাক্ষর ও বাস্তবায়নে অংশ নেবে।

তিনি জানান, কমিশনের মেয়াদ ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, যাতে মেয়াদকালের মধ্যেই তারা চূড়ান্ত সুপারিশ দিতে পারে এবং বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়। রীয়াজ বলেন, “সনদ বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা চলছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও তা অব্যাহত থাকবে। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যত্যয় না ঘটুক, সে দায়িত্ব কমিশনের।”

বাম দলগুলোর সনদে সই না করার ঘোষণার প্রসঙ্গে আলী রীয়াজ বলেন, “তারা আলোচনার সময় আপত্তির কথা জানিয়েছে, কমিশন সেগুলো গ্রহণ করেছে। ভিন্নমত থাকবেই, তবে আমরা আশা করি, বামদলগুলোও অনুষ্ঠানে অংশ নেবে।”

সব দল যদি স্বাক্ষর না করে, তাহলে সনদের ভবিষ্যৎ কী হবে—এমন প্রশ্নে রীয়াজ বলেন, “স্বাক্ষর একটি আনুষ্ঠানিকতা। মূল বিষয় হলো, এই প্রক্রিয়ায় কার ভূমিকা কী ছিল, তা দেশের মানুষ দেখেছে। ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় দলগুলো অঙ্গীকার করেছে, প্রতিশ্রুতি দিয়েছে—এটা সবাই জানে।”

সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “সবচেয়ে বড় আয়োজন হচ্ছে জুলাই সনদ নিজেই। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বড় পরিবর্তন আসবে।” তিনি জানান, আগামীকাল অনুষ্ঠানে সনদ প্রণয়নের প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ কার্যকারিতা নিয়ে ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হবে। আগামী দুই মাস ধরে এই সনদ নিয়ে আরও কাজ চলবে বলেও তিনি জানান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামানসহ অন্যান্য সদস্যরা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *