ঐতিহাসিক জুলাই জাতীয় সনদ (July National Charter) ২০২৫–এর স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না অন্তর্বর্তী সরকারের দুই গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা—আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া (Asif Mahmud Sajib Bhuiyan) এবং মাহফুজ আলম (Mahfuz Alam)। সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টারা অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত থাকলেও, বিকালজুড়ে সাংবাদিকদের চোখে পড়েনি এই দুই উপদেষ্টাকে।
রাজনৈতিক মহলে কানাঘুষা চলছে, জুলাই আন্দোলনের দাবিদার ছাত্রনেতাদের রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) (National Citizen Party) এবং জাতীয় ঐক্যমত কমিশন (National Consensus Commission)-এর মধ্যে চলমান মতপার্থক্যের কারণেই আসিফ ও মাহফুজ অনুষ্ঠানে অংশ নেননি। এনসিপি জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে তিন দফা দাবি জানায়—সনদের সংশোধন, তা সংবিধানে স্থায়ীভাবে অন্তর্ভুক্তি এবং জুলাই যোদ্ধাদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। যদিও শেষ মুহূর্তে কমিশন সনদের পঞ্চম দফায় কিছু সংস্কার আনে, কিন্তু এনসিপি সেটিকে অপর্যাপ্ত বলে মনে করে।
অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বে আছেন মাহফুজ আলম। ফলে তাদের অনুপস্থিতি রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিকাল সাড়ে চারটার দিকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)। তার সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন ২০ জন উপদেষ্টা—যাদের মধ্যে ছিলেন অর্থ ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন ও প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেন, স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প ও গৃহায়ন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, খাদ্য ও ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং আরও অনেকে।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, নৌ ও শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, প্রাথমিক শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, মৎস্য উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, সমাজকল্যাণ ও মহিলা বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, বাণিজ্য, বস্ত্র ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মোঃ মাহফুজ আলম এবং সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
অনুষ্ঠানের মঞ্চে দেখা গেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি—বিএনপি (BNP)-র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর (Jamaat-e-Islami) নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকনসহ আরও অনেককেই।
উল্লেখ্য, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে মোট ২৪টি রাজনৈতিক দল ও জোট জুলাই সনদে স্বাক্ষর করে। তবে এনসিপিসহ ছয়টি দল—সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্কসবাদী), বাংলাদেশ জাসদ, এনসিপি এবং গণফোরাম—সনদে স্বাক্ষর করেনি। গণফোরামের প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও তারা চূড়ান্তভাবে সই থেকে বিরত থাকে।
অন্যদিকে সনদে স্বাক্ষরকারী দলগুলোর তালিকায় ছিল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, জেএসডি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, এলডিপি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় গণফ্রন্ট, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, আমজনতার দল, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও জাকের পার্টি।
তবে অনুষ্ঠানের আলোচনায় মূলত অনুপস্থিত দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলমের নামই ছিল কেন্দ্রবিন্দুতে—তারা কেন এলেন না, তার উত্তর এখনও অজানা। রাজনৈতিক অঙ্গনে এই অনুপস্থিতি তাই শুধু প্রোটোকল নয়, বরং এক নতুন রাজনৈতিক সংকেত হিসেবেই ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।