“আমি বিএনপির, কোনো রোহিঙ্গা নই”—কঠোর অবস্থানে অ্যাডভোকেট পাপিয়া

বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা ও নানা জটিলতা ছড়িয়ে পড়েছে, ঠিক তখনই নাটোর-১ (লালপুর–বাগাতিপাড়া) আসনে বিএনপি (BNP)-এর ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া দলীয় শৃঙ্খলা, নির্বাচন এবং জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে এক কঠোর অবস্থান জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে বাগাতিপাড়ার জামনগর বাজার এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভায় তিনি স্পষ্ট কণ্ঠে বলেন,
‘আমি বিএনপির কোনো রোহিঙ্গা নই, আমি বিএনপির কোনো হাইব্রিড প্রার্থী নই, আমি দলের কোনো অনুপ্রবেশকারীও নই। আমি আমার পরিবারের কারো পরিচয়ে পরিচিত নই। আমি রাজপথের কর্মী, মিছিল করি, জেল খাটি, দলের জন্য লড়ি।’

সরকারের আচরণ ও নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে পাপিয়া বলেন,
‘স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এরশাদকে উৎখাতে লেগেছিল ৯ বছর, পরবর্তী স্বৈরাচারকে যেতে লেগেছে ১৫ বছর—কিন্তু শেষ পর্যন্ত উৎখাত হয়েছে। বর্তমান সরকার যদি মনে করে নির্বাচনের নামে শুধু ঘোষণা দেবে কিন্তু নির্বাচন করবে না, মানুষের রায় বিকৃত করবে, জনমতকে প্রভাবিত করবে—তাহলে ১৮ কোটি মানুষ এই সরকারকে আর বরদাশত করবে না।’

তিনি আরও বলেন,
‘আমরা নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ১৫ বছর ধরে লড়াই করছি। এই আন্দোলনে অনেককে হারিয়েছি। জুলাই–আগস্টের অভ্যুত্থানে বহু মানুষ জীবন দিয়েছে। তাদের আত্মত্যাগ আজ বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের সম্মানের প্রতীক। এই আত্মত্যাগকে উপহাস করা বা টালবাহানা করা কোনোভাবেই চলবে না।’

দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্যের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে অ্যাডভোকেট পাপিয়া বলেন,
‘বৃহৎ দলে মনোনয়নপ্রত্যাশী অনেক থাকতেই পারে—এটাই দলের প্রাণশক্তির প্রতীক। তবে একে অপরকে নিয়ে বিভেদ বা বিশৃঙ্খলা তৈরি করা কাম্য নয়। ঐক্যই বিএনপির শক্তি, এই ঐক্য রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব।’

তিনি নাটোরের এক নেতাকে উদ্দেশ্য করে সমালোচনা করে বলেন,
‘সংবাদপত্র সাংবাদিক থেকে শুরু করে লালপুর, বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রাম, সিংড়া—সব জায়গার খবর কে করবে, কেমন করে করবে, সব নিয়ন্ত্রণ করা হয়! সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণ মানে খারাপ কাজ ঢেকে রাখা। খারাপ কাজের ব্যবসায়ীরাই সংবাদপত্রকে নিয়ন্ত্রণ করে যাতে সত্য প্রকাশ না হয়। এই নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করুন।’

তিনি আরও যোগ করেন,
‘সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের উচিত বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা—কারও নিয়ন্ত্রণে নয়, সত্যের পক্ষে কাজ করা।’

রাজনীতিতে রঙভিত্তিক বিভাজনের সমালোচনা করে পাপিয়া বলেন,
‘লাল, সবুজ, হলুদ সংকেত ফুটবল মাঠের জন্য প্রযোজ্য, রাজনীতির জন্য নয়। আমি কোনো লাল কার্ড বা সবুজ কার্ড নিয়ে আসিনি। রাজনীতি কোনো খেলাধুলা নয়—এটা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম।’

ধর্মীয় স্লোগান ও কালেমার অপব্যবহার নিয়েও তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
‘মুসলমানদের কালেমাকে কেউ বিকৃতভাবে উপস্থাপন করতে পারে না। এটা কোনো দলের স্লোগান নয়—এটা মুসলমানদের ঈমানের অংশ। মসজিদ পবিত্র স্থান, সেখানে রাজনীতি করা ঠিক নয়। কোনো মাওলানা বা ইমাম যদি কোনো প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন জানাতে চান, তাহলে মসজিদের বাইরে এসে তা করতে পারেন। কিন্তু মসজিদকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।’

দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, পাপিয়ার এই বক্তব্য স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন সাড়া ফেলেছে। মাঠ পর্যায়ে বিএনপির কর্মীরা নতুন উদ্দীপনা ও মনোবল নিয়ে সংগঠিত হচ্ছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, নাটোর-১ আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি, নেতৃত্ব ও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অবস্থান নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা ততই জোরদার হচ্ছে।

বার্তাবাজার/এমএইচ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *