জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগকে বাদ দিলে নির্বাচন হবে না: জি এম কাদেরের হুঁশিয়ারি

জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ (Awami League) ছাড়া নির্বাচন করতে গেলে সেটি ‘কোনো নির্বাচনই হবে না’—এমন স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন জাতীয় পার্টি (Jatiya Party) চেয়ারম্যান জি এম কাদের (GM Quader)। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, মাত্র ৩ শতাংশ মানুষের সমর্থনে তারা নির্বাচন আয়োজন করতে চায়, যা দেশের সঙ্গে করা বড় ধরনের ষড়যন্ত্রের শামিল।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাকরাইলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে উপজেলা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় জি এম কাদের এসব কথা বলেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, “যে নির্বাচনের জন্য আমরা শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট বলি, পাতানো খেলা বলি—এখন সেই একই পথ অনুসরণ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। ঐক্য কমিশনের নামে তারা অনৈক্যের কমিশন করেছে। দেশের অর্ধেক মানুষকে বাদ দিয়ে ‘ঐক্য’ করার নামে একটা ষড়যন্ত্র চলছে।”

তিনি আরও বলেন, “এটা কোনো সাধারণ রাজনৈতিক চক্রান্ত নয়, বরং দেশ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র। যারা এতে অংশ নিচ্ছে, দেশের মানুষ কখনোই তাদের ক্ষমা করবে না।”

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “বিশ্বের বড় বড় শক্তির সমর্থন পেয়েও শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে পারেননি। দেশের মানুষ তাঁকে লাথি মেরে বিদায় দিয়েছে। এখন যারা পাতানো খেলায় নেমেছে, তাদের রাজনীতি দুই মিনিটও টিকবে না।”

অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন জি এম কাদের। বলেন, “যাদের নিজস্ব রাজনৈতিক দল রয়েছে, তারা কখনো নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার হতে পারে না। আমরা আন্দোলন করেছিলাম একটি দলনিরপেক্ষ, নিরপেক্ষ সরকারের জন্য।”

তিনি দাবি করেন, বর্তমান সরকার জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দিয়ে নির্বাচনের পরিকল্পনা করছে। অথচ জাতীয় পার্টি নির্বাচনী ফলাফলের দিক থেকে তৃতীয় বৃহত্তম দল। চতুর্থ দল জামায়াতে ইসলামী। অথচ এখন প্রচার চলছে যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এক, আর জামায়াত হচ্ছে ‘তৃতীয় শক্তি’। জি এম কাদের বলেন, “জামায়াত এটা প্রচার করছে যাতে জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে তারা তৃতীয় শক্তি হিসেবে জায়গা নিতে পারে।”

তিনি অভিযোগ করেন, “আওয়ামী লীগকে বাদ দেওয়া হলেও এর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। যদি দলটিকে নিষিদ্ধ করতে হয়, তাহলে তা করতে হবে মামলার মাধ্যমে। কিন্তু এখন প্রশাসনিক আদেশে দলটিকে বাদ দেওয়া হচ্ছে, যা বেআইনি।”

সভায় দলের মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, “জাতীয় ঐকমত্যের অভাব এখন বিভাজনের সৃষ্টি করছে। সরকার নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে চায়। এদের দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। প্রয়োজন নির্দলীয় বা সর্বদলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার।”

তিনি হুঁশিয়ারি দেন, “জাতীয় পার্টিকে ছাড়া নির্বাচন করার চেষ্টা হলে, তা আমরা প্রতিহত করবো।”

জাতীয় পার্টির এই অবস্থান স্পষ্টতই ইঙ্গিত দিচ্ছে, আগামী নির্বাচন নিয়ে দেশে যে রাজনৈতিক বিভক্তি তৈরি হয়েছে তা আরও ঘনীভূত হতে চলেছে। নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা আরও বাড়ছে, আর জাতীয় পার্টি সেই উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *