জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রার্থী বাছাই ও আসন ভাগাভাগি নিয়ে কঠিন সমীকরণে পড়েছে বিএনপি (BNP)। দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সংখ্যা রেকর্ড ছাড়ালেও, যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জন্য আসন ছাড়ার চাপ আর ভোটের প্রতীক ব্যবহারের নতুন নিয়ম একে আরও জটিল করে তুলেছে।
আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এর আগে চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যেই প্রার্থী চূড়ান্ত করে ‘সবুজ সংকেত’ দিতে চায় বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ (Salahuddin Ahmed) জানিয়েছেন, ‘এ মাসের মধ্যেই দলের পক্ষ থেকে কমবেশি ২০০ নির্বাচনী এলাকায় একক প্রার্থীকে হয়তো আমরা গ্রিন সিগন্যাল দেব।’ দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে বলেও তিনি জানান।
এই প্রক্রিয়ার পাশাপাশি, ১২ দলীয় যুগপৎ আন্দোলনে থাকা শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগির আলোচনা চলছে। সূত্রমতে, শরিকেরা বিএনপির কাছে ২০০টির বেশি আসন ছাড় চেয়েছে। যদিও বাস্তবতা বিবেচনায় বিএনপি সর্বোচ্চ ৩০টি আসন ছাড়ার বিষয়ে ভাবছে। এর মধ্যে অন্তত ১৫ জন শরিক প্রার্থীকে ইতোমধ্যে সবুজ সংকেতও দেওয়া হয়েছে।
শরিকদের তালিকায় এখন নতুন করে আলোচনায় এসেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) (National Citizen Party – NCP)। এনসিপির সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা ও আসন বণ্টনের আলোচনা ইতোমধ্যে বিএনপির সঙ্গে এগিয়েছে। দলটির জন্য ৫ থেকে ৭টি আসন ছাড়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও এনসিপির দাবি আরও বেশি। এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘আমরা এখনো সম্ভাব্যতা যাচাইপর্বে আছি। আমাদের লক্ষ্য সরকার গঠন করা। সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে উঠে আসতে চাই।’
তবে এসব হিসাবের বাইরে গিয়ে বিএনপিকে চিন্তায় ফেলেছে ভোটের প্রতীক ব্যবহারে আনা নতুন বিধান। সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, এবার জোটের প্রার্থীরা নিজের দলের প্রতীকেই নির্বাচন করবেন। ফলে বিএনপির জনপ্রিয় ধানের শীষ প্রতীক শরিকরা ব্যবহার করতে পারবেন না। এ নিয়মে নতুন করে কৌশল নির্ধারণ করতে হচ্ছে দলটিকে। নির্বাচনী জরিপে শরিকদের অনেক প্রার্থীর মাঠপর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা দুর্বল বলেও বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন।
বিএনপির এক নীতিনির্ধারক বলেন, ‘প্রার্থীরা জিততে পারবেন কি না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। শরিকদের অনেকে ভালো প্রার্থী দিতে পারছেন না। আবার যাকে দেওয়া হবে, তিনি হেরে গেলে ওই আসনটা পুরোপুরি হারাব আমরা।’
এই বাস্তবতায় অনেক শরিক দল আগে জমা দেওয়া প্রার্থী তালিকা ছোট করার উদ্যোগ নিয়েছে। গণতন্ত্র মঞ্চ-এর নেতা সাইফুল হক জানিয়েছেন, ‘আমরা যে তালিকা করেছিলাম, তার শর্টলিস্ট করছি। চার-পাঁচ দিনের মধ্যে বিএনপির সঙ্গে বসব।’
এছাড়া বাংলাদেশ এলডিপি-র চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘নতুন নিয়মে নিবন্ধিত ছোট দলগুলো অচেনা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে গেলে সমস্যায় পড়বে। তাদের জেতা কঠিন হবে। তবে যাদের নিবন্ধন নেই, তাদের এমন ঝামেলা নেই।’
একই কথা বলেছেন জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট-এর নেতা ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। তার ভাষায়, ‘গ্রামের মানুষ ছোট দলের প্রতীক চেনে না। এত কম সময়ে সেই প্রতীক পরিচিত করাও সম্ভব নয়।’ তাই প্রতীক ব্যবহারের নিয়ম ও শরিকদের চাওয়া- পাওয়ার মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করাই এখন বিএনপির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
এই সবকিছু মিলিয়ে বিএনপির নির্বাচন পরিকল্পনায় জোটের বাস্তবতা ও আইনি জটিলতা—দুয়েরই প্রভাব স্পষ্ট। কৌশল নির্ধারণে তাদের সময় কম, কিন্তু হিসাব-নিকাশ বড়ই জটিল।


