ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকার ২০টি সংসদীয় আসনে প্রায় চূড়ান্ত মনোনয়ন তালিকা তৈরি করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, প্রার্থীদের অনেকে ইতিমধ্যেই গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে গেছেন, যদিও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও আসেনি।
বিএনপির উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানিয়েছে, ঢাকার এই ২০টি আসনে মনোনয়নের জন্য অর্ধশতাধিক নেতা দীর্ঘদিন ধরে মাঠে ছিলেন। তৃণমূল জরিপ ও জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত হয়েছে। কোথাও কোথাও একই পরিবারের একাধিক সদস্য মনোনয়ন চাইলেও শেষ পর্যন্ত জনমতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ঢাকা-১ আসন
দোহার-নবাবগঞ্জ নিয়ে গঠিত আসনটিতে মনোনয়ন পাচ্ছেন জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক। একই আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন ব্যারিস্টার মেহনাজ মান্নানও।
ঢাকা-২ আসন
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমান এই আসনে মনোনয়ন পাচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন ছেলে ইরফান ইবনে আমান ও যুবদলের নেতা রেজাউল করিম পল।
ঢাকা-৩ আসন
কেরানীগঞ্জের এই আসনে মনোনয়ন পাচ্ছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। মনোনয়ন চেয়েছিলেন তার পুত্রবধূ নিপুণ রায় চৌধুরীও।
ঢাকা-৪ আসন
এই আসনে দল বেছে নিয়েছে তরুণ নেতা তানভীর আহমেদ রবিনকে। তার পিতা সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদও প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন।
ঢাকা-৫ আসন
তানভীর রবিন ৪ নম্বর আসনে মনোনয়ন পাওয়ায় এই আসনটিতে নমিনেশন পেতে যাচ্ছেন নবী উল্লাহ নবী ।
ঢাকা-৬ আসন
এখানে মনোনয়ন পাচ্ছেন খোকাপুত্র ইশরাক হোসেন, যিনি এক সময় মেয়র পদে লড়েছিলেন।
ঢাকা-৭ আসন
এই আসনে গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী যদি জোটগতভাবে আসেন, তবে তিনিই প্রার্থী হবেন। অন্যথায় ধানের শীষ পাচ্ছেন প্রয়াত নাসির উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা।
ঢাকা-৮ আসন
এই হেভিওয়েট আসনে মনোনয়ন অনেক আগেই চলে গেছে স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য মির্জা আব্বাস-এর ঝুলিতে।
ঢাকা-৯ আসন
একই পরিবারে দুটি মনোনয়ন না দেওয়ার নীতিতে এবার এই আসনে প্রার্থী হচ্ছেন হাবিব উন নবী খান সোহেল। এখানে মির্জা আব্বাসের স্ত্রী জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আফরোজা আব্বাসও মাঠে ছিলেন।
ঢাকা-১০ আসন
প্রায় নিশ্চিত ধানের শীষ পাচ্ছেন নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবি। এ আসনে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাছির উদ্দীন আহমেদ অসীম মাঠে ছিলেন।
ঢাকা-১১ আসন
এখানে মনোনয়ন নিশ্চিত এম এ কাইউম-এর, যিনি দলের কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্রঋণবিষয়ক সম্পাদক।
ঢাকা-১২ আসন
মনোনয়ন পাচ্ছেন সাবেক যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার ও কেন্দ্রীয় সহ অর্থবিষয়ক সম্পাদক থেকে পদত্যাগ করা মো. সাহাবুদ্দিন আহমেদ এখানে নমিনেশন চেয়েছিলেন।
ঢাকা-১৩ আসন
এই আসনে বিএনপি নিজস্ব কোনো নেতাকে মনোনয়ন না দিয়ে এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ-কে প্রার্থী করেছে।
ঢাকা-১৪ আসন
এখানেও দল বেছে নিয়েছে বহিরাগত পরিচিত মুখকে—‘মায়ের ডাক’ খ্যাত সানজিদা ইসলাম তুলি মনোনয়ন পেয়েছেন।
ঢাকা-১৫ আসন
এই আসনে এখনও প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি। তবে মামুন হাসানের সম্ভাবনা বেশি বলে জানা গেছে। যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম মিল্টনও এখানে মনোনয়ন প্রত্যাশী।
ঢাকা-১৬ আসন
মনোনয়ন নিশ্চিত ঢাকা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হকের।
ঢাকা-১৭ আসন
বিএনপি নিজ দলের কাউকে না দিয়ে এই আসনে ধানের শীষ দিচ্ছে বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ-কে। বিএনপি নেতা কামাল জামাল মোল্লা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম আলোচনায় থাকলেও তারা কেউ মনোনয়ন পাচ্ছেন না।
ঢাকা-১৮ আসন
এখানে এস এম জাহাঙ্গীরের সম্ভাবনা প্রবল, যদিও এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন এর পাশাপাশি এ আসনে দলীয় প্রার্থী হতে চান কফিলউদ্দিন আহমেদ ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব হাজী মোস্তফা জামান।
ঢাকা-১৯ আসন
এ আসনে ধানের শীষ চান ঢাকা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ এবং কফিল উদ্দিন। তবে এই আসনে এরই মধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে ডা. দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিনকে টেলিফোনে গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
ঢাকা-২০ আসন
ধামরাই আসনে ধানের শীষ পাচ্ছেন তমিজ উদ্দিন। তবে এখনো মাঠে আছেন মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, তরুণ নেতা ইয়াসিন ফেরদৌস মোরাদ, ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান অভি।
প্রাথমিক ভাবে প্রার্থী ঠিক করা হলেও আরপিও’র নির্বাচনী মার্ক নিয়ে সমস্যার সমাধান না হলে ছেড়ে দেওয়া আসন গুলিতে পরিবর্তন আসতে পারে। সেক্ষত্রে অন্য দলের যারা জোট করে ঢাকাতে নির্বাচন করতে চাচ্ছেন তাদেরকে তাদের নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচন করতে বলা হতে পারে বলে জানিয়েছে বিএনপি’স নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটি সূত্র।
এদিকে, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, এখনও কারও মনোনয়ন চূড়ান্ত নয়। তবে আন্দোলন-সংগ্রামে অবদান ও জনপ্রিয়তাই মনোনয়নের মূল বিবেচ্য হবে বলে জানান তিনি।
**এক নজরে ২০ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা
ঢাকা-১: খন্দকার আবু আশফাক
ঢাকা-২: আমান উল্লাহ আমান
ঢাকা-৩: গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
ঢাকা-৪: তানভীর আহমেদ রবিন
ঢাকা-৫: নবী উল্লা নবী
ঢাকা-৬: ইশরাক হোসেন
ঢাকা-৭: সুব্রত চৌধুরী / নাসিমা কল্পনা
ঢাকা-৮: মির্জা আব্বাস
ঢাকা-৯: হাবিব উন নবী সোহেল
ঢাকা-১০: শেখ রবিউল আলম রবি
ঢাকা-১১: এম এ কাইউম
ঢাকা-১২: সাইফুল আলম নীরব
ঢাকা-১৩: ববি হাজ্জাজ
ঢাকা-১৪: সানজিদা ইসলাম তুলি
ঢাকা-১৫: মামুন হাসান / মিলটন
ঢাকা-১৬: আমিনুল হক
ঢাকা-১৭: আন্দালিভ রহমান পার্থ
ঢাকা-১৮: এস এম জাহাঙ্গীর
ঢাকা-১৯: ডা. দেওয়ান সালাহউদ্দিন
ঢাকা-২০: তমিজ উদ্দিন


