খুলনা বিভাগে বিএনপির ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়ে মাঠে যে ৩৫ প্রার্থী

ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সরকারের ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী ডিসেম্বরের মধ্যেই তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন (Election Commission)। এই নির্বাচনকে ঘিরে রাজনীতির মাঠ এখন উত্তপ্ত, আর এরই মধ্যে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ৩৫টি আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ প্রায় শেষ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (Bangladesh Nationalist Party – BNP)। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান থেকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পাওয়া অনেক নেতাই ইতোমধ্যে ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনা বিভাগজুড়ে যে প্রার্থীরা অনুমোদনের ইঙ্গিত পেয়েছেন, তারা নিজেদের এলাকায় প্রচারে ব্যস্ত। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো নাম ঘোষণা করেনি বিএনপি।

খুলনা জেলার প্রার্থী তালিকা
খুলনা-১ আসনে জিয়াউর রহমান পাপুল মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে জানা গেছে। খুলনা-২ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নাম প্রায় নিশ্চিত। খুলনা-৩ আসনে একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল। খুলনা-৪ আসনে আজিজুল বারী হেলালের নাম সামনে এসেছে, আর খুলনা-৫ আসনে ধানের শীষের প্রতীক পেতে যাচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য আলী আজগর লবী। খুলনা-৬ আসনে জেলা আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

সাতক্ষীরা জেলা
সাতক্ষীরা-১ আসনে সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব মনোনয়ন পাচ্ছেন, সাতক্ষীরা-২ আসনে এগিয়ে আছেন আব্দুল আলিম। সাতক্ষীরা-৩ আসনে সাবেক এমপি কাজী আলাউদ্দিনের নাম আলোচনায়, আর সাতক্ষীরা-৪ আসনে ড. মনিরুজ্জামান পাচ্ছেন দলের আস্থা।

বাগেরহাট জেলা
বাগেরহাট-১ আসনে প্রবীণ নেতা আকরাম হোসেন তালিম, বাগেরহাট-২ আসনে শামীমুর রহমান শামীম এবং বাগেরহাট-৩ আসনে অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

নড়াইল ও ঝিনাইদহ
নড়াইল-১ আসনে জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস, নড়াইল-২ আসনে সমঝোতার মাধ্যমে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ মনোনয়ন পেতে পারেন। ঝিনাইদহে চারটি আসনেই মনোনয়ন চূড়ান্তের পথে। ঝিনাইদহ-১ এ আসাদুজ্জামান, ঝিনাইদহ-৩ এ ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ঝিনাইদহ-৪ এ সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, আর ঝিনাইদহ-২ আসনে সমঝোতার সম্ভাবনা রয়েছে গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খানের সঙ্গে।

কুষ্টিয়া ও মাগুরা জেলা
কুষ্টিয়া-১ আসনে রেজা আহম্মেদ বাচ্চু, কুষ্টিয়া-২, ৩ ও ৪ আসনে এখনো চূড়ান্ত হয়নি নাম। মাগুরা-১ এ আলী আহমেদ বিশ্বাস এবং মাগুরা-২ আসনে নিতাই রায় চৌধুরীর নাম উঠে এসেছে।

চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর
চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে সাবেক ছাত্রদল সভাপতি শামসুজ্জামান দুদু মনোনয়ন পাচ্ছেন, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের নাম চূড়ান্ত। মেহেরপুর-১ এ মাসুদ অরুণ এবং মেহেরপুর-২ এ জাভেদ মাসুদ মিল্টন দলের অনুমোদন পেয়েছেন বলে জানা যায়।

যশোর জেলার প্রার্থীরা
যশোর জেলার ছয়টি আসনে মোট ৩৫ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন। এর মধ্যে যশোর-১ আসনে সাবেক এমপি মফিকুল হাসান তৃপ্তি, যশোর-২ এ সাবিরা নাজমুল মুন্নি, যশোর-৩ এ অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, যশোর-৪ এ ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব, যশোর-৫ এ শহীদ ইকবাল হোসেন এবং যশোর-৬ আসনে কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েছেন।

দলের একাধিক নেতা জানান, খুলনা বিভাগে বিএনপি এবার তরুণ ও মাঠে সক্রিয় নেতাদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তবে স্থানীয় সমর্থন, আন্দোলনে ভূমিকা ও সাংগঠনিক তৎপরতাই চূড়ান্ত মনোনয়নের মূল মানদণ্ড।

সবমিলিয়ে খুলনা বিভাগজুড়ে বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি এখন প্রায় পূর্ণাঙ্গ রূপ নিচ্ছে। যদিও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বাকি, তবুও মাঠের রাজনীতি ইতোমধ্যে গতি পেয়েছে—ধানের শীষের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে বলেই জানাচ্ছেন স্থানীয় নেতারা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *