বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব জনগণের ভোটের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা—এমন মন্তব্য করেছেন তারেক রহমান (Tarique Rahman)। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “কারো দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন করা এ সরকারের কাজ নয়।”
শনিবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি)–তে আয়োজিত হিন্দু প্রতিনিধি সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্য জোট। সম্মেলনে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন এবং তাঁদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন।
তারেক রহমান সতর্ক করেন, দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হলে “পরাজিত ও পলাতক ফ্যাসিবাদী অপশক্তির” পুনর্বাসনের সুযোগ তৈরি হতে পারে। এজন্য তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে এ বিষয়ে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
তার ভাষায়, “ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সময় যারা ফ্যাসিবাদের রোষানল থেকে বাঁচতে গুপ্ত কৌশল নিয়েছিলেন, সেই পদ্ধতি এখন পতিত ও পরাজিত শক্তিরাও ব্যবহার করতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “গুপ্ত কৌশলের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চলছে কি না, সে বিষয়ে গভীর নজরদারি জরুরি।”
তিনি অভিযোগ করেন, রাজপথে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছিলেন, তাদের কেউ কেউ আজ নিজেদের ভূমিকার মাধ্যমে ‘আপনার-আমার-আমাদের’ অধিকার ও সুযোগকে হুমকির মুখে ফেলছেন।
তারেক রহমান বলেন, “এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রধান কৌশল হলো একটি ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা।” বিএনপি এই ঐক্য রক্ষায় সহমর্মিতা, সহযোগিতা ও সমঝোতার মনোভাব নিয়ে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
বিএনপিকে ‘শান্তিকামী, সহনশীল এবং গণমুখী রাজনৈতিক দল’ হিসেবে আখ্যায় দেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, “ভিন্ন মত ও ভিন্ন দলের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখা বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ।” জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করাই বিএনপির রাজনীতির মূলে রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশ কিছু নীতিগত ঘোষণা দেন তারেক রহমান। নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হলে ৫০ লাখ স্বল্প আয়ের পরিবারকে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ প্রদান করা হবে। পাশাপাশি তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, “তরুণদের কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং বিদেশে কাজের উপযোগী ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে, যাতে তারা দক্ষ জনশক্তি হিসেবে দেশে-বিদেশে কাজ করতে পারে।”
বাংলাদেশে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের বিষয়টি তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, “এই বৈচিত্র্যের মধ্যেই রয়েছে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের সৌন্দর্য।” তিনি একে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ (Bangladeshi Nationalism) হিসেবে অভিহিত করেন।
সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকারের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আপনার যতটুকু অধিকার, আমারও ঠিক ততটুকুই অধিকার। কেউ কম, কেউ বেশি—তা হতে পারে না।” হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের উত্থাপিত দাবিগুলো পূরণের প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্য জোটের আহ্বায়ক সোমনাথ সেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের দাবিগুলো তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
এছাড়াও বক্তব্য দেন মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্য জোটের সদস্যসচিব ও মুখপাত্র কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল, যুগ্ম আহ্বায়ক সমেন সাহা, হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, হিন্দু ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার এবং মতুয়া সম্প্রদায়ের নেত্রী সুবর্ণা রানী ঠাকুর।


