বিএনপি (BNP)-র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি আজ (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জরুরি বৈঠকে বসেছে। রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই বৈঠক শুরু হয় সন্ধ্যা ৭টার কিছু পর। তারেক রহমান (Tarique Rahman) লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন বলে জানান বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।
বৈঠকের নির্দিষ্ট এজেন্ডা প্রকাশ করা না হলেও ধারণা করা হচ্ছে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)-এর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণ ও গণভোটের ঘোষণা এই বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয়। আজ দুপুরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ড. ইউনূস ঘোষণা দেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়ন নিয়ে একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। একইসঙ্গে তিনি ব্যাখ্যা করেন, এই গণভোট দেশের ভবিষ্যৎ সংবিধান সংস্কার কাঠামো নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বিকেলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণের মাধ্যমে জুলাই সনদ লঙ্ঘন করেছেন। সংবিধান সংস্কার পরিষদ একটি নতুন ধারণা, যা ঐকমত্য কমিশনে আলোচিত হয়নি।” তাঁর মতে, ইউনূসের একতরফা ঘোষণা প্রক্রিয়ার বাইরে।
ড. ইউনূস তার ভাষণে জানান, আসন্ন নির্বাচনের দিনই ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। এতে চারটি বিষয়ের ওপর ভোটারদের মতামত নেওয়া হবে একটি মাত্র প্রশ্নে:
“আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং তাতে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবগুলোর প্রতি সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?”
চারটি মূল প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে—
ক) নির্বাচনকালীন সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গঠন,
খ) দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও উচ্চকক্ষের ভূমিকা,
গ) প্রধানমন্ত্রী মেয়াদ সীমা, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, বিচার বিভাগ ও স্থানীয় সরকারের স্বাধীনতা,
ঘ) এবং সব রাজনৈতিক দলের সম্মতিসূচক সংস্কার বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ইতোমধ্যে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’-এ স্বাক্ষর করেছেন, যা বৃহস্পতিবার দুপুরেই কার্যকর হয়।
এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির জরুরি বৈঠককে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন। কারণ দীর্ঘদিন ধরেই দলটি একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের দাবি জানিয়ে আসছিল। তবে ইউনূসের ঘোষণায় বিএনপি যে সন্তুষ্ট নয়, তা সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্যেই স্পষ্ট।
বর্তমান পরিস্থিতিতে এই বৈঠকে বিএনপি কী অবস্থান নেবে এবং আগামী দিনের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে কী বার্তা দেবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর আগ্রহ তৈরি হয়েছে।


