মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)-র বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সোমবার (১৭ নভেম্বর) ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করার পর, বিশ্বের খ্যাতনামা সংবাদমাধ্যমগুলো এই খবর প্রকাশ করে শিরোনাম করে তোলে।
আল জাজিরা তাদের প্রতিবেদনে লেখে, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের হাসিনার মৃত্যুদণ্ড।’ তাতে বলা হয়, “বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। দীর্ঘ বিচার শেষে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে গত বছর ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনে নৃশংস দমনপীড়নের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে।”
রয়টার্স শিরোনাম করেছে: ‘ছাত্রদের ওপর দমনপীড়নের মামলায় বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হাসিনা দোষী সাব্যস্ত’। তারা উল্লেখ করে, এই রায় ঘোষিত হলো এমন এক সময়ে, যখন ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
বিবিসি তাদের প্রতিবেদনের শিরোনামে বলে, ‘বিক্ষোভ দমনে নৃশংসতার দায়ে বাংলাদেশের সাবেক নেত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড’। এতে বলা হয়, “হাসিনার অনুপস্থিতিতে বিচার চলে এবং তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধে।”
আনাদোলু এজেন্সি-র ব্রেকিং খবরে উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনা এবং তার সহযোগীদের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা লেখে, ‘শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডই দিল বাংলাদেশের ট্রাইবুনাল! রায় ঘোষণা হতেই হাততালিতে ফেটে পড়ল আদালতকক্ষ’। এ প্রতিবেদনে বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারসহ ট্রাইব্যুনালের তিন সদস্যের উপস্থিতিতে রায় সরাসরি সম্প্রচারের কথাও বলা হয়েছে।
এএফপি বলেছে, “বিচারক রায় পড়ার সময় আদালতকক্ষে উল্লাসধ্বনি ওঠে। আদালত ৭৮ বছর বয়সী হাসিনাকে ভারত থেকে দেশে ফিরে আসার নির্দেশ দিলেও তিনি তা অমান্য করেন।”
সিএনএন তাদের শিরোনামে বলে, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড’। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, “এই রায় এমন এক সময় এসেছে, যখন ছাত্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটেছিল।”
দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড’। তারা উল্লেখ করে, “রায়টি ঘোষিত হয়েছে হাসিনার অনুপস্থিতিতে এবং তার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর।”
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস প্রশ্ন তোলে, ‘শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড: এখন কী হবে?’ তারা মন্তব্য করে, “২০০৯ সালে তিনি নিজেই যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিলেন, সেটাই আজ তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।”
দ্য হিন্দু এবং দ্য হিন্দু লাইভ-এও প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। তারা উল্লেখ করে, “ছাত্র দমন-পীড়নের মামলায় শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।”
পাকিস্তানের ডন পত্রিকা শিরোনামে লেখে, ‘ছাত্রদের ওপর দমন-পীড়নের দায়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড’। তারা এটিকে রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এইসব প্রতিবেদনে একটি বিষয় স্পষ্ট—রায়ের গুরুত্ব শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়া ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির বড় পরিসরে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
রায়টি ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার (Golam Mortuza Mojumdar)-এর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ। একই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (Asaduzzaman Khan Kamal)-কেও মৃত্যুদণ্ড এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন (Chowdhury Abdullah Al-Mamun)-কে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।


