আট দলের সাথে আসন সমঝোতায় নির্বাচন, সাত বিভাগীয় শহরে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা জায়ায়াতের

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনভিত্তিক সমঝোতার মাধ্যমে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami) সহ আটটি ইসলামপন্থী দল। বুধবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর পল্টনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ।

হামিদুর রহমান আযাদ জানান, “আটটি দল সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশ নেবে। পাশাপাশি অন্য দলের জন্যও জোটের দরজা খোলা থাকবে।” তিনি আরও বলেন, “আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এবারের ভোটে বিএনপির সঙ্গে পুরোনো জোট আর কার্যকর নেই। জুলাই অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক চিত্র বদলে গেছে। তাই ইসলামি দলগুলো আলাদা জোট গঠন করে নির্বাচনে যেতে চায়।”

আসন্ন নির্বাচনের সঙ্গে একযোগে গণভোট আয়োজনের সরকারি ঘোষণার বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করে জামায়াত নেতা বলেন, “একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের সক্ষমতা সরকারের রয়েছে কি না, তা নিয়েও আমাদের সংশয় রয়েছে।”

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘জুলাই সনদ’ অনুসারে সংসদের উচ্চকক্ষে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোট অনুযায়ী আসন বণ্টনের কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হয়নি। তাই নির্বাচনকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে এই আটটি দল পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। এর মধ্যে রয়েছে—জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করা, দলগুলোর প্রাপ্ত ভোট অনুযায়ী উচ্চকক্ষে আসন বণ্টন, গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগে আলাদাভাবে আয়োজন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর স্বচ্ছ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ পক্ষে প্রচার চালানোর সিদ্ধান্তের কথাও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। নেতারা বলেন, “জুলাই সনদের ভিত্তিতে গণভোট একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তাই ‘হ্যাঁ’ জয়ী করতে আমরা প্রচার চালাব।”

আটটি দল হলো: জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি।

সংবাদ সম্মেলনে ৩০ নভেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা বাদে সাতটি বিভাগীয় শহরে সমাবেশের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচি অনুযায়ী:
– ৩০ নভেম্বর রংপুর
– ১ ডিসেম্বর রাজশাহী
– ২ ডিসেম্বর খুলনা
– ৩ ডিসেম্বর বরিশাল
– ৪ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ
– ৫ ডিসেম্বর সিলেট
– ৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির ইউসুফ আশরাফ এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “গণভোটে ‘হ্যাঁ’ বিজয়ী করতে আট দল সম্মিলিত প্রচার চালাবে।”

সংবাদ সম্মেলনের আগে আট দলের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় পল্টনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট দলের শীর্ষ নেতারা।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর বদলে যাওয়া রাজনৈতিক সমীকরণে ইসলামী দলগুলো বিএনপি–জামায়াত নেতৃত্বাধীন পুরোনো জোট থেকে সরে এসে নতুনভাবে নিজস্ব ব্লক গঠনের মাধ্যমে নির্বাচনী রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছে—এমনটাই উঠে এসেছে এই ঘোষণায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *