পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পে ৩০ কাঠা সরকারি জমির প্লট বরাদ্দে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে দায়ের করা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তিন মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina), তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় (Sajeeb Wazed Joy), ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল (Saima Wazed Putul)সহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে রায় আজ বৃহস্পতিবার ঘোষণা করবেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন। রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার পর গত রোববার তিনি এ দিন ধার্য করেন।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মীর আহম্মেদ সালাম রায়ের তারিখ নিশ্চিত করেন। গত শুনানিতে মামলার একমাত্র গ্রেপ্তার ও কারাবন্দি আসামি, রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলমকে আদালতে হাজির করা হয়। দুদকের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবী খান মো. মাইনুল হাসান লিপন। তিনি বলেন, “আমরা প্রত্যাশা করছি, আদালত আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা—যাবজ্জীবন কারাদণ্ড—দেবে।”
এই রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আদালতের প্রবেশ মুখে বসানো হয়েছে পুলিশের তল্লাশি চৌকি। এ ছাড়া নিরাপত্তা জন্য বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের ডিসি মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন হাছান বলেন, নিয়মিত সদস্যের পাশাপাশি অতিরিক্ত আরও দুই প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবির দুই প্লাটুন সদস্য দায়িত্বে আছেন। এ ছাড়া স্থানীয় থানার পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা টহলে আছেন। নিরাপত্তা নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো শঙ্কা নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক আছে।
মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের পক্ষে আইনজীবী শাহীনুর রহমান যুক্তি তুলে ধরেন এবং অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি দাবি করে খালাস চান। যদিও দুদকের আইনজীবী লিপন পাল্টা বলেন, “আসামিদের বিরুদ্ধে আমরা যে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি, তাতে সর্বোচ্চ সাজা প্রাপ্য।”
চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ দুর্নীতির অভিযোগে দুদক মোট ছয়টি মামলা করে, যার মধ্যে এই তিনটির বিচার শেষ পর্যায়ে। আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের পর বিচার শুরু হয় এবং এ পর্যন্ত তিনটি মামলার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। তবে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যসহ মামলার ২২ জন আসামি বর্তমানে পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
গত ১০ নভেম্বর মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয় এবং এরপর ১৭ নভেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজের বক্তব্যে খুরশীদ আলম নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন। এর আগে ৩১ জুলাই আদালত এই তিন মামলাসহ ছয়টি মামলায় মোট ২৩ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন।
এই মামলার অন্যান্য আলোচিত আসামিদের মধ্যে আছেন শেখ রেহানা (Sheikh Rehana)-র মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক (Tulip Rizwana Siddiq), ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক এবং মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক। এছাড়াও মামলায় নাম এসেছে সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, এবং রাজউকের একাধিক সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা।
দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়, রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা পূর্বাচল আবাসিক প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রোডে ছয়টি প্লট নিজেদের নামে বরাদ্দ নেন, যা ছিল সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অযোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও দুর্নীতির মাধ্যমে করা হয়েছে। সরকারের সর্বোচ্চ পদে থেকে নিজের অবস্থানকে ব্যবহার করে পরিবারসহ এভাবে জমি বরাদ্দ নেওয়াকে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার হিসেবে দেখা হয়েছে মামলার নথিতে।


