সুনামগঞ্জ-২: জামায়াতের হেভিওয়েট শিশির মনিরের বিপক্ষে বিএনপির নাসির চৌধুরীর নাটকীয় প্রত্যাবর্তন

এক সিদ্ধান্তেই পাল্টে গেল সুনামগঞ্জ-২ আসনের রাজনীতির দৃশ্যপট। নাটকীয়ভাবে নাসির চৌধুরী (Nasir Chowdhury)-কে প্রার্থী করে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে ভাটির জনপদ দিরাই-শাল্লা। প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত (Suranjit Sengupta)-র সঙ্গে বহু বছরের মুখোমুখি রাজনীতির এক ঐতিহাসিক পর্বের সাক্ষী নাসির চৌধুরী ১৯৯৬ সালে তাক লাগানো জয় পেয়ে ছিলেন এই আসনে, হারিয়ে ছিলেন সেই সময়কার জাতীয় রাজনীতির অন্যতম প্রধান মুখ সুরঞ্জিতকে।

এরপর ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকলেও সুরঞ্জিতের কাছে পরাজিত হন নাসির। কিন্তু এলাকার মানুষের মাঝে তিনি ছিলেন এবং রয়েছেন এক শ্রদ্ধেয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে। বর্তমানে বয়সের ভার ও অসুস্থতা সত্ত্বেও দিরাই-শাল্লায় তার জনপ্রিয়তা আজও অটুট। এলাকার মানুষ মনে করেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুর পর নাসির চৌধুরী হয়ে উঠেছেন তাদের একমাত্র রাজনৈতিক আশ্রয়স্থল।

সেই ভাবনাই হয়তো এবার বাস্তব রূপ পেয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সবাইকে চমকে দিয়ে বিএনপি (BNP)-র কেন্দ্রীয় ঘোষণায় জানানো হয়, সুনামগঞ্জ-২ আসনে দলের প্রার্থী হিসেবে বয়োবৃদ্ধ নেতা নাসির চৌধুরীকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

এই সিদ্ধান্তে দিরাই-শাল্লার তৃণমূল বিএনপি যেমন আনন্দিত, তেমনি দলীয় হাইকমান্ডের সঙ্গে grassroots-এর এই ঐক্য অনেককে অবাক করেছে। অসুস্থ শরীর নিয়ে ঢাকা থেকে যখনই নাসির এলাকায় যান, সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বাস চোখে পড়ার মতো হয়। একাধিকবার তিনি এলাকায় এসে জনসভা ও মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়েছেন। সর্বশেষ সফরে, দুই উপজেলার বহু মানুষ তাকে প্রার্থী করার দাবিতে সরব হন।

বিএনপির এই মনোনয়নে কিছুটা চাপে পড়েছিল, কারণ মাঠে ছিলেন আরও দুই শক্তিশালী প্রার্থী—বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী রুমি এবং ত্যাগী তরুণ নেতা এডভোকেট তাহির রায়হান চৌধুরী পাভেল। তরুণদের মাঝে পাভেল ছিলেন প্রভাবশালী নাম, অনেকে তাকে নাসির চৌধুরীর উত্তরসূরি হিসেবে দেখতে শুরু করেছিলেন। তবে মনোনয়ন পাওয়ার পরও পাভেল ধানের শীষের পক্ষে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছেন।

অন্যদিকে, বিচারপতি রুমির অনুসারীরাও নাসির চৌধুরীর সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে ইতিমধ্যেই মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। অর্থাৎ, প্রার্থীতা নিয়ে বিএনপির ভেতরে বিভাজনের যে শঙ্কা ছিল, তা আর নেই। বরং এই সিদ্ধান্তে দিরাই-শাল্লায় বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনের মাঠে নামার সুযোগ পাচ্ছে।

এদিকে, ওই আসনে জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami)-র পক্ষ থেকে এডভোকেট শিশির মনিরকে প্রার্থী করা হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে তিনি সেখানে সক্রিয় থাকলেও তার প্রার্থিতা নিয়ে স্থানীয়ভাবে কিছু সমালোচনাও রয়েছে।

সবমিলিয়ে, সুনামগঞ্জ-২ আসনে আবারও ফিরছে সেই পুরোনো উত্তেজনা, যার সূচনা হয়েছিল নাসির-সুরঞ্জিত দ্বৈরথের মাধ্যমে। এবার আর সুরঞ্জিত নেই, কিন্তু নাসির আছেন। এবং তিনিই এখন একা একশ’—বলে মন্তব্য করছেন অনেকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *