রংপুরে মুক্তিযোদ্ধা দম্পতি হত্যা: টাইলস মিস্ত্রি যুবক গ্রেপ্তার

রংপুরের তারাগঞ্জে সাবেক প্রধান শিক্ষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় (Yogesh Chandra Roy) এবং তাঁর স্ত্রী সুবর্ণা রায় (Subarna Roy)–কে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় অবশেষে গ্রেপ্তার হয়েছে এক যুবক। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ—ডিবি পুলিশ (DB Police)—রাত ১টার দিকে আলমপুর ইউনিয়নের ফাজিলপুর শেরমস্ত গ্রামে তার নিজ বাড়ি থেকে আটক করে ২৫ বছর বয়সী মোরসালিন ইসলাম (Morsalin Islam) নামের ওই যুবককে।

গ্রেপ্তার হওয়া মোরসালিন স্থানীয় রুহুল আমিনের ছেলে। পেশায় টাইলস মিস্ত্রি হলেও পাশাপাশি তারাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। কয়েকদিন আগেই তিনি যোগেশ চন্দ্র রায়ের বাড়িতে টাইলস লাগানোর কাজ করেছিলেন। ডিবি পুলিশের তথ্য অনুসারে, কাজ করার সময় বাড়িতে প্রচুর অর্থ আছে—এমন ধারণা থেকেই তার মনে লোভ তৈরি হয়। সেই লোভ থেকেই শুরু হয় হত্যার পরিকল্পনা।

গত শনিবার রাত ১০টার দিকে বাড়ি থেকে একটি চায়নিজ কুড়াল হাতে নিয়ে মোরসালিন যোগেশ চন্দ্র রায়ের বাড়ির পেছনের কাঁঠাল গাছ বেয়ে দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করেন। প্রথমে তিনি সুবর্ণা রায়কে কুপিয়ে হত্যা করেন, এরপর একইভাবে তিনি যোগেশ চন্দ্র রায়কে নির্মমভাবে হত্যা করেন। হত্যার পর আলমারির তালা ভেঙে অর্থ লুটের চেষ্টা চালালেও কোনো টাকা না পেয়ে তিনি খালি হাতেই সরে পড়েন। ব্যবহৃত কুড়ালটি তিনি পাশের পুকুরে ফেলে দেন।

ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোরসালিন হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে। সে জানায়, পরিবারে আর্থিক টানাপোড়েন চলছিল এবং মাত্র ৮ হাজার টাকার ঋণের চাপে পড়েই সে এই ভয়াবহ পথ বেছে নেয়।

রংপুর জেলা পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইন মারুফ (Marufat Husain Maruf) বলেন, গত ৬ ডিসেম্বর কুড়াল দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা দম্পতিকে হত্যা করে মোরসালিন। টাইলসের কাজ করার সময় বাড়িতে অর্থ থাকা নিয়ে ভুল ধারণা ও ঋণের চাপ তাকে এই অপরাধে প্ররোচিত করেছে। তিনি আরও জানান, হত্যার পর আলমারির তালা ভেঙে টাকা নেওয়ার চেষ্টা চালালেও সে কিছু পায়নি। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে পুকুরে ফেলা কুড়ালটিও।

পুলিশের দাবি, এই হত্যাকাণ্ডে অন্য কারও সম্পৃক্ততা আছে কি না—তা এখনো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে সব তথ্য এখনই প্রকাশ করা না গেলেও, মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে শিগগিরই বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *