ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির ওপর হা’\মলার ঘটনা পূর্বেই সরকারকে জানানো হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। জুলাই যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে টার্গেট কিলিংয়ের পরিকল্পনার বিষয়টি স্পষ্টভাবে গোয়েন্দা সংস্থাসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার পরও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে এই দুঃসাহসিক হা’\মলা ঠেকানো যায়নি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্য প্রবাসী এক আইনজীবী এই হা’\মলার বিষয়ে স্পর্শকাতর এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য পান। তিনি এই তথ্য সরাসরি সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছে তুলে ধরেন। আইনজীবীটি দাবি করেন, তার পেশাগত সূত্রে বিশ্বের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিকিউরিটি এজেন্সির সঙ্গে সংযোগ থাকায় তিনি এসব তথ্য পেয়েছেন এবং তা যাচাই করেই সতর্কবার্তা পাঠান। তার মতে, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের বিপদ ঘটতে পারে—এই আশঙ্কা তিনি স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছিলেন।
জুলাই যোদ্ধাদের ওপর হা’\মলার তালিকায় ওসমান হাদি ছাড়াও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদসহ আরও কয়েকজনের নাম ছিল। তথ্য পাওয়ার পর আইনজীবীটি সেপ্টেম্বরে ঢাকায় এসে ওসমান হাদি, ফুয়াদ ও হাসনাতের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরপর সংশ্লিষ্টরা সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তাদের আশঙ্কা ছিল, মাঠপর্যায়ে রাজনীতি করা নেতাদের জীবন হুমকির মুখে। তখন সরকারের পক্ষ থেকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী দেওয়ার প্রস্তাব আসে, কিন্তু নেতারা রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে তা গ্রহণ করেননি।
ব্যারিস্টার ফুয়াদ শুক্রবার বলেন, ‘অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সূত্রে হামলার তথ্য পেয়েই আমরা সরকারকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাড়িয়ে কোনো লাভ হয় না, কারণ এসব পরিস্থিতিতে পুলিশের ওপর নির্ভর করে মাঠে নামা প্রায় অসম্ভব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সরকারকে বারবার বলেছি নির্বাচনের আগে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান চালাতে হবে। বিশেষ করে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’
হা’\মলার আগাম তথ্যদাতা সেই আইনজীবী বর্তমানে ঢাকাতেই অবস্থান করছেন। হা’\দির ওপর হা’\মলার ঘটনার পর শুক্রবার তিনি বলেন, জুলাই সংগঠকদের বিষয়ে তার হাতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল। সেই সূত্রেই তিনি বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন এবং যুক্তরাজ্য থেকে ঢাকায় এসে সরাসরি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার দৃষ্টিতেও আনেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হা’\দির ওপর হা’\মলা রোধ করা যায়নি। এখনো অন্য নেতারাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন বলে তার আশঙ্কা।
সরকারি অবস্থান জানতে চাওয়া হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে ফোনে পাওয়া যায়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি ও পুলিশ প্রধান বাহারুল আলমের নম্বরেও কল করা হলেও সাড়া মেলেনি। তাদের সবাইকে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো উত্তর আসেনি।
নভেম্বরে শরীফ ওসমান হাদি নিজেও এক ফেসবুক পোস্টে আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি লেখেন, ‘গত তিন ঘণ্টায় আমার নম্বরে আ’ওয়ামী লী’গের খু’\নিরা অন্তত ৩০টি বিদেশি নম্বর থেকে কল ও টেক্সট করেছে। তারা বলেছে, আমাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে, আমার বাড়িতে আগুন দেওয়া হবে, আমার মা, বোন ও স্ত্রীকে ধর্ষণ করবে, আমাকে হ’\ত্যা করবে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘১৭ তারিখ খু’\নি হাসিনার রায় হবে। ১৪শ শহীদের রক্তের ঋণ মেটাতে যদি আমাকে জ্বালিয়ে দিতে হয়, তাও এই ইনসাফের লড়াই থেকে আমি একচুলও নড়ব না। এক আবরারকে হ’\ত্যা করে হাজারো আবরার জন্মেছে। এক হাদিকে হ’\ত্যা করলে আল্লাহ লক্ষ হাদি তৈরি করবেন। আমি আমার আল্লাহর কাছে শহী’\দি মু’\ত্যুর তাওফিক চাই।’
পুলিশ সূত্র জানায়, হাদির ওপর হা’\মলার পেছনে বিদেশে অবস্থানরত সন্ত্রাসীদের হাত থাকতে পারে। এক ভাড়াটে কিলার ফিলিপ ওরফে গারো ফিলিপের নাম পাওয়া গেছে। তাকে ধরতে ইতোমধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে। পুলিশ বলছে, ফিলিপকে ধরতে পারলে এই কিলিং মিশনের পেছনে থাকা চক্রের পরিচয় উন্মোচিত হতে পারে।


