ওসমান হাদির ওপর গু’\লি’\ব’\র্ষণের ঘটনায় জড়িত একজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করার দাবি করেছে অনুসন্ধানী প্ল্যাটফর্ম দ্য ডিসেন্ট। তাদের অনুসন্ধানে অভিযুক্ত হিসেবে উঠে এসেছে ফয়’\সাল করিম মাসুদের নাম। দ্য ডিসেন্ট জানায়, ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার থেকে সংগৃহীত ৯ ডিসেম্বরের সিসিটিভি ফুটেজ, পুলিশের সংগ্রহ করা ১২ ডিসেম্বরের হামলার সিসিটিভি ফুটেজ, বিভিন্ন মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি এবং ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ফয়’\সাল করিম মাসুদ নামের অ্যাকাউন্টসহ আওয়ামীপন্থি বিভিন্ন পেইজ ও ব্যক্তিগত প্রোফাইলে পোস্ট করা ৫০টিরও বেশি ছবি বিশ্লেষণ করে তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাইকের পেছন থেকে ওসমান হাদির ওপর গু’\লি করা ব্যক্তিটির চেহারার সঙ্গে ফয়’\সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান নামের একজনের চেহারার মিল রয়েছে। পুরোনো সংবাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি রাজধানীর আদাবর থানা ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। দুটি ফেইস ডিটেকশন অ্যাপ ব্যবহার করে ফয়’\সাল করিমের একাধিক ছবি তুলনামূলকভাবে যাচাই করেও ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের সিসিটিভি ফুটেজে দৃশ্যমান ব্যক্তির সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হলো, গু’\লি’\কা’\রীর বাম হাতে থাকা বিশেষ ডিজাইনের একটি ঘড়ি। একই ধরনের ঘড়ি পরা অবস্থায় ফয়’\সাল করিম মাসুদের ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুক প্রোফাইলে একাধিক ছবি পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়েছে।
২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে একাধিক মূলধারার সংবাদমাধ্যমে ফয়’\সাল করিমের ছবি প্রকাশ করে জানানো হয়, রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আদাবর এলাকায় একটি অফিসে ঢুকে পি’\স্তলের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় তাকে প্রধান আসামি হিসেবে গ্রে’\প্তার করে র্যাব। ওই ঘটনায় ডাকাতির মামলাও হয়। তবে গ্রে’\প্তারের পর মাত্র এক মাসের মধ্যেই কীভাবে তিনি জা’\মিনে মুক্তি পান, সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।
এদিকে জুলকারনাইন সায়ের (Zulkarnain Saer), আলজাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক, তার একটি পোস্টে দাবি করেন— অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম ফয়’\সাল করিম মাসুদ, ছদ্মনাম দাউদ বিন ফয়’\সাল। তার ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি সাবেক ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি, ঢাকা মহানগর উত্তর এবং আদাবর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। সায়ের আরও দাবি করেন, ফয়’\সাল করিম ছিলেন জাহাঙ্গীর কবির নানক (Jahangir Kabir Nanak) ও আসাদুজ্জামান খান কামাল (Asaduzzaman Khan Kamal)-এর ঘনিষ্ঠ অনুসারী।
আরেকটি পোস্টে সায়ের লেখেন, ওসমান হাদির ওপর আক্রমণকারীদের একজন হিসেবে উল্লেখ করা ফয়’\সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান ৮ নভেম্বর ২০২৪ ঢাকার আদাবরে একটি স্কুলে ঢুকে পি’\স্তলের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় গ্রে’\প্তার হয়েছিলেন। তার কাছ থেকে দুটি বিদেশি পি’\স্তল, দুটি ম্যাগাজিন এবং পাঁচ রাউন্ড গু’\লি জব্দ করা হয়েছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এমন একজন ব্যক্তি কীভাবে জা’\মিন পেলেন— সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
আমাদের হাতে থাকা ছবিগুলোর একটি ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের। চলতি মাসের ৯ তারিখে তোলা ওই ছবিতে দেখা যায়, হাদির পাশে বসে আছেন সেই ব্যক্তি, যাকে তাকে গু’\লি করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। ওই দিন তারা একসঙ্গেই ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়েছিলেন বলে জানা যায়।
উল্লেখ্য, শুক্রবার জুমার নামাজের পর বেলা ২টা ২৫ মিনিটে বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় ওসমান হাদির ওপর গু’\লি’\ব’\র্ষণের ঘটনা ঘটে। ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান (Muhammad Talebur Rahman) জানান, মোটরসাইকেলে আসা হামলাকারীরা হাদিকে গু’\লি করে দ্রুত পালিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, দুর্বৃত্তরা মোট তিনটি মোটরসাইকেলে করে এসেছিল।
হাদির এক সহযোদ্ধা জানান, জুমার নামাজের পর মসজিদে লিফলেট বিলির কর্মসূচি ছিল তাদের। কর্মসূচি শেষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একত্র হয়ে দুপুরের খাবার খাওয়ার কথা ছিল।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক চিকিৎসকদের বরাতে জানান, মাথায় গু’\লি’\বি’\দ্ধ অবস্থায় ওসমান হাদিকে জরুরি বিভাগে আনা হলে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকদের মতে, হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। গু’\লি বাম কানের ওপর দিয়ে ঢুকে ডান পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ায় তার ব্রেন স্টেম পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা ‘ম্যাসিভ ব্রেন ইনজুরি’ হিসেবে বিবেচিত। আগামী ৭২ ঘণ্টা তার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলেও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
এর আগে, গত ১৩ নভেম্বর গভীর রাতে দেওয়া এক পোস্টে শরিফ ওসমান হাদি নিজেকে হ’\ত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন এবং সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন। ওই পোস্টে তিনি লেখেন, বিদেশি নম্বর থেকে একাধিক হুমকিমূলক কল পেয়েছেন এবং তার পরিবারসহ তাকেই টার্গেট করা হচ্ছে। তবে কোনো হুমকিতেই তিনি তার আন্দোলনের পথ থেকে সরে দাঁড়াবেন না বলেও স্পষ্ট করে জানান।


