অন্তর্বর্তী সরকারের ছাত্র উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করার পর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তাঁরা বিএনপি, গণঅধিকার পরিষদ কিংবা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা—তা নিয়ে তৈরি হয়েছিল জল্পনা-কল্পনা। তবে শেষ পর্যন্ত সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে এই দুই তরুণ নেতা যোগ দিচ্ছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizens’ Party বা NCP)-তে।
দলের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে এনসিপিতে যোগ দিচ্ছেন জুলাই মাসের অভ্যুত্থানের অন্যতম দুই মুখ মাহফুজ ও আসিফ। দলটির উচ্চপর্যায়ের সূত্র এবং উভয় নেতার ঘনিষ্ঠজনেরা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এনসিপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছেন দুজনেই। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি ঢাকা-১০ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন। অন্যদিকে, মাহফুজ আলম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন লক্ষীপুর-১ আসনে। এনসিপি ইতিমধ্যেই ১২৫টি আসনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে, যেখানে এই দুই আসনে প্রার্থী দেয়নি—যা ছিল বড় একটি ইঙ্গিত।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব ইত্তেফাককে বলেন, “শেখ হাসিনার পতনের জন্য চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম দুই ছাত্রনেতা, যাঁরা সেই অভ্যুত্থানের চেতনায় বিশ্বাসী, তাঁদের এনসিপিতে যোগ দেওয়া স্বাভাবিক। তাঁদের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দু-এক দিনের মধ্যেই আসবে।”
এর আগেই এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, “আসিফ মাহমুদ জনতার কাতারে এসেছেন, আমরা তাকে স্বাগত জানাই। তিনি কোন দল থেকে নির্বাচন করবেন সেটি তার সিদ্ধান্ত। যদি এনসিপিতে আসেন, আমরা অবশ্যই তাকে স্বাগত জানাব।”
একইভাবে, যখন সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এনসিপিতে যোগ দেন, তখনও তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়েছিল। এখন সেই একই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন মাহফুজ ও আসিফ।
তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে দেরি হওয়ার পেছনে কিছু কৌশলগত হিসাবনিকাশও রয়েছে। দলটির একটি নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়, আসিফ এনসিপিতে যোগ দিয়ে সংগঠনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদমর্যাদা চান, যা আহ্বায়কের ঠিক নিচে। অন্যদিকে, মাহফুজ সাংগঠনিক ক্ষমতা না চাইলেও দলে প্রভাবশালী অবস্থান দাবি করছেন। এসব বিষয়ে আলাপ-আলোচনার কারণেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা কিছুটা পিছিয়েছে।
উল্লেখ্য, এনসিপিতে ইতিমধ্যেই যোগ দিয়েছেন অভ্যুত্থানের আরেক নেতা নাহিদ ইসলাম। তিনি ফেব্রুয়ারিতে উপদেষ্টা পদ ছেড়ে দলটির প্রতিষ্ঠাতাকালীন আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
এই দুই ছাত্রনেতার যোগদানে এনসিপির রাজনীতিতে বড় ধরনের গতি আসবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।


